হজ্ব গাইড

এগুলো হজ্বের সফরের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ অভিজ্ঞতা। তা নিয়মতান্ত্রিক হজ্বের কোন বিধি-বিধান না। হজ্বের সফরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৌশল মাত্র যাতে সফরটি সুন্দর ও সফল হয়। সকলে এর সাথে একমত নাও হতে পারে বা পরিবেশ-পরিস্থিতি হিসেবে কম বেশি হতে পারে। তবে অনেকেই তা পছন্দ করেছেন ও প্রশংসা করেছেন। তাই হজ্বে সফরকারীর সামান্য উপকারার্থে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

বাড়ী থেকে প্রস্তুতি
ক্স হজ্বের কার্যাদি সম্পাদনের যে কোন একটি নির্ভরযোগ্য বই সাথে নিয়ে যান এবং প্রতিদিন তা পড়–ন। যাতে কাজগুলোর সঠিক নিয়ম আত্মস্থ হয়ে যায়।
ক্স হজ্বের নিয়মাবলি, বিধিবিধান, মাসয়ালা-মাসায়েল আবশ্যই ভালভাবে শিখে যান।
ক্স হজ্বে যাওয়ার সময় কিছু বস্তু অবশ্যই সাথে নিবেন, তাতে সফর সহজ হবে ও পরবর্তীতে আফসোস করা লাগবে না।
ক. একটি ছাতা সঙ্গে নিবেন। বাসা থেকে মসজিদে হারামে ও দিনে তাওয়াফ করতে ও আরো অনেক সময় কাজে লাগবে।
খ. চিড়া-গুড় নারিকেল দিয়ে সম্ভব হলে পাকিয়ে নিয়ে যাবেন। মাঝে মাঝে কাজে আসবে।
গ. একটি কালো মার্কার পেন সাথে নিবেন। বিভিন্ন সময় বস্তুর গায়ে বিশেষত যমযমের পানির বোতলের প্যাকেটের গায়ে নাম ঠিকানা লেখা লাগবে।
ঘ. তিনটি বোঁঝা বাঁধা যায় এ পরিমাণ রশি বেশি করে নিবেন। আসার সময় মালপত্র বাঁধার জন্য রশি অনেক দামে ক্রয় করতে হয়।
ঙ. হ্যান্ডক্যারী করার জন্য ব্যাগ নিবেন যাতে সহজেই অনেক মাল বহন করা যায়। এই অল্প সময়ের জন্য অনেক দামে তা ক্রয় করতে হয়।
এক্ষেত্রে ৩টি ব্যাগ নেয়া যায়। প্রত্যেকটির মুখে চেইন ওয়ালা হবে। ১টি পিঠে, ২টি দুই হাতে।
চ. বেশিকরে কষ্টিপ নিয়ে নেন। ব্যান্ডেজের কস্টিপও সাথে নিয়ে নেন। ফেরার সময় কাজে আসবে। অন্যথায় অনেক দামে কিনতে হবে।
ছ. স্বামী-স্ত্রী একসাথে গেলে স্বামী রঙ্গিন চকচকে টুপি ব্যবহার করুন। আর স্ত্রী রঙ্গীন স্কার্প ব্যবহার করুন। ভিড়ের মধ্যে চিনতে সুবিধা হবে। তাই অন্যান্য বস্তুর সাথে তাও নিয়ে নেন।
ক্স সাধারণ পরার জন্য যে পায়জামা নিবেন তাতে দুই দিকে চেইন বিশিষ্ট পকেট ও সামনে চেইন ওয়ালা হলে ভাল হয়।
ক্স কিছু বাংলাদেশি টাকা সাথে রাখুন যাতে প্রয়োজনে আসতে গাড়ী ভাড়া দিতে পারেন।
ক্স বিমানে উঠতে তাড়াহুড়া করা হয়। বিজ্ঞজনরা তা অসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেন। যেহেতু সবার জন্য সিট বরাদ্দ রয়েছে, তাই ধাক্কা-ধাক্কির কোন কারণ নাই। মনে রাখবেন আপনাকে না নিয়ে বিমান ছাড়বে না।
ক্স বিমানে বাথরুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। তাই হয়তো বাথরুম করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা টয়লেট টিসু ব্যবহার করতে হবে। এ বিষয় না জানার কারনে অনেকে বিব্রত হয়।
ক্স এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ কিছু ওয়েট টিসু (ভেজা টিসু) সাথে নেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে আপনিও তা করতে পারেন।
ক্স বিমানে কোন নামাযের ওয়াক্ত চলে যাওয়ার ভয় থাকলে তাতে দাঁড়িয়ে নামায আদায় করে নিতে হবে। কিছুতেই নামায কাযা করা যাবে না।
ক্স বিমানে অনেক সময় নজরের হিফাজতে বিঘœ ঘটে। তাই এতে খেয়াল রাখা জরুরী। দৃষ্টির খেয়ানত করে নিজের হজ্ব বরবাদ করা অনুচিত।

জেদ্দা এয়ারপোর্ট
ক্স সৌদিতে ইমেগ্রেশন ত্যাগ করে প্রথমে নামায আদায়ের ব্যবস্থা করে নিন।
ক্স সৌদিতে ইমেগ্রেশন ত্যাগ করে বাংলা দেশের ক্যাম্পে গেলে প্রথমে সেখানকার কর্তব্যরত ব্যক্তিদেরকে নিজেদের আগমন সম্পর্কে অবহিত করুন। তাহলে তাড়াতাড়ি হোটেলে পৌঁছে দিবে।
ক্স এয়ারপোর্ট থেকে ঐদেশের সিম না কিনা ভাল। কারণ দাম বেশি হয়। মক্কায় বা মদীনায় গিয়ে কিনলে দাম কম হয়।
ক্স অবশ্য স্ত্রী বা বৃদ্ধ কাউকে নিয়ে গেলে উভয়ে সিম কিনে নেয়া ভাল যাতে সবসময় যোগাযোগ করা যায় ও হারানোর ভয় না থাকে।
ক্স আপনার সাথের বাংলাদেশী মুয়াল্লিম সিম কিনে থাকলে তার নাম্বার অবশ্যই সাথে রাখুন। সমস্যা হলে তাকে ফোন করুন বা কাউকে ফোন করতে অনুরোধ করুণ ও সমস্যা সমাধান করুন।
ক্স এ স্থানগুলোতে প্রচুর পরিমানে বিড়ম্বনা হতে পারে। কখনও কখনও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে ৫/৬ ঘন্টাও লাগতে পারে। তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।

হোটেল

ক্স মক্কায় পৌঁছে হোটেলের সিট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যদি কারো ঠান্ডার সমস্যা থাকে তাহলে সরাসরি এসির বাতাসের নিচে সিট নিবে না। অন্য দিকে নিতে হবে।
ক্স হোটেলের খাবারের নির্দিষ্ট নিয়ম থাকে তা স্মরণ রেখে তা মানার চেষ্টা করুন। কারন খাবার শেষ হলে বা কম হলে, তলানী হলে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না।
ক্স মক্কায় ও মদীনায় যে হোটেলে থাকবেন অবশ্যই হোটেল থেকে কার্ড সংগ্রহ করে রাখুন। রাস্তায় হারিয়ে গেলে কাউকে কার্ড দেখালে পৌঁছে দিবে। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য অবশ্যই সার্বক্ষনিক হোটেল কার্ড সাথে রাখা জরুরী। অনেক মহিলা হারিয়ে গিয়ে আবার বাসায় পৌঁছতে বেশ কষ্ট হয়েছে ও তা পেরেশানীর বড় কারণ হয়।
ক্স আপনার সাথে থাকা বৃদ্ধ বাবা মাকে বা স্ত্রী, বোনকে শিখিয়ে রাখবেন যে, হারিয়ে গেলে যেন মক্কায় যমযম টাওয়ার তথা ঘড়ী টাওয়ারের নিচে থাকে। বা অন্য কোন স্থান ঠিক করে রাখুন যাতে হারিয়ে গেলে সেখান থেকে পাওয়া যায়।
ক্স হোটেলে দুই ধরণের রুম থাকে। কিছু ইংলিশ কমড। কিছু নরমাল কমড। এমন রুম নেয়ার চেষ্টা করবে যার পাশে বাথরুমে নরমাল কমড থাকবে। ইংলিশ কমড থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবে।
ক্স সকল স্থানে ওজু ও গোসলের পানি গরম থাকে বিষয়টি মাথায় রেখে তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
ক্স আপনার সাথের বাংলাদেশী মুয়াল্লিম সিম কিনে থাকলে তার নাম্বার অবশ্যই সাথে রাখুন। সমস্যা হলে তাকে ফোন করুন বা কাউকে ফোন করতে অনুরোধ করুণ ও সমস্যা সমাধান করুন।

ক্স মসজিদের আন্ডার গ্রাউন্ডে হিফজখানা রয়েছে। সেখানে একটি দাতব্য বিভাগ আছে। তা থেকে পবিত্র কুরআন ও ধর্মীয় আরবী ও বাংলা বই ফ্রী দেয়া হয়। প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করুন।
ক্স কারো কারো কিছু আচরণ আপনার দৃষ্টিতে অসুন্দর লাগবে। যেমন- ফ্লোরে কুরআন শরীফ রেখে পড়া, কাবা শরীফের দিকে পা দিয়ে বসা, মসজিদের হারামে বসে ভিডিও দেখা ইত্যাদি। এনিয়ে আপনি বিতর্কে লিপ্ত হবেন না। গীবত- শেকায়াত করবেন না। মনে রাখবেন আপনি কাউকে সংশোধন করতে সেখানে যাননি। বরং নিজের সংশোধনের জন্য গিয়েছেন। তাই নিজে অবশ্যই সমূহ আদবের প্রতি খেয়াল করে ন¤্রভাবে চলার চেষ্টা করুন।
ক্স দীর্ঘ সময় নিয়ে দোয়া কান্নাকাটি করুন। নাম ধরে ধরে নিজের পরিবারের, আত্মীয়স্বজনের, দেশের, মুসলিম বিশ্বের জন্য দোয়া করুন।
ক্স আপনার সাথে কোন অতি বৃদ্ধ ব্যক্তি বা মহিলা থাকলে এবং সে চলতে কষ্ট হলে তার জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করুণ। বিশেষত হজ্বের দিনগুলোতে তা অতি জরুরী হবে। তাই মক্কায় পৌাছেই হুইল চেয়ারের সন্ধান করুণ।
ক্স বাংলাদেশী হজ্ব মিশন থেকে ডাক্তারী সেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ দেয়া হয়। অতি প্রয়োজনে তা গ্রহণ করতে পারেন।

তাওয়াফ, হাজরে আসওয়াদ, হাতীমে কাবা, মুলতাজাম

ক্স তাওয়াফে ভীড় কমের সময় সাধারণত : সকাল ৮ থেকে ১২ টা, দুপুর ২টা থেকে ৩টা, রাত ৯টার পর থেকে। তবে দিনে এ সময়গুলোতে প্রচন্ড রোদ থাকে তাই ছাতা ব্যবহার করুন।
ক্স মাতাফে ভীড় থাকলে মহিলাগণ দূর দিয়ে তাওয়াফ করুন। ধাক্কা কম হবে। ভীড়ে যত কাছে দিয়ে তাওয়াফ করা হবে তত পুরুষের ধাক্কা বেশি হবে।
ক্স সহজে তাওয়াফ করার একটি সুন্দর সময় হল এশার জামাত হয়ে যাওয়ার পর ২ রাকাত সুন্নত পড়ে সাথে সাথে তাওয়াফ শুরু করলে প্রায় ১৫ মিনিটে একটি তাওয়াফ শেষ করা যাবে। কারণ মানুষের ভিড় না থাকার কারনে অতি নিকটে থেকে তাওয়াফ করা যায়। তাই তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।
ক্স হাজরে আসওয়াদে চুমার ক্ষেত্রে লোকজন কম থাকে সাধারণত : রাত ১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ও বৃষ্টি হলে। তাই এই সুযোগ নিতে পারেন। তবে হজ্বের সময় কাছে আসলে এ সময়ও ভীড় থাকে। আর তা হজ্বের পরেও ১০ দিন থাকে।
ক্স হাজরে আসওয়াদে চুমা দেয়া অনেক সাওয়াব। কিন্তু এতে করে ধাক্কাধাক্কি করা ও কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। হজ্বের মওসুমে লোক সংখ্যা বেশি হওয়াতে ধাক্কা-ধাক্কি বেশি হয়। অবশ্য এ ক্ষেত্রে এমন একটি পদ্ধতি রয়েছে যা অবলম্বন করলে ধাক্কা-ধাক্কি ও ভীড় ছাড়াই সহজে সুন্দরভাবে চুমা দেয়া যায়।
তা হল- প্রতিদিন কয়েক ওয়াক্ত নামাযে আযানের পর পর জামাতের পূর্বে কর্তব্যরত পুলিশ লাইনে চুমা দেয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। বিশেষতÑফজরের পূর্বে, আসরের পূর্বে, এশার পূর্বে। আপনি এ সুযোগের অপেক্ষায় থাকুন ও লাইনে দাড়িয়ে চুমা দিন। যে ওয়াক্তে লাইন ধরানো হয় আপনি ঐ ওয়াক্তের বেশ আগ থেকেই রুকনে ইয়ামানির সাথে ঘেঁষে দাড়িয়ে থাকুন। লাইন ধরলে সাথে সাথে তাতে শরীক হোন।
ক্স ফজরের নামাযের এক/দেড়ঘন্টা পর থেকে লোকজন বেশ ফাঁকা হতে শুরু করে। এ সময় চাইলে তাওয়াফ ও কাবা শরীফের দরজায় নিচের অংশ মুলতাজামে ধরা ও দু’আ করা যাবে। তাই এর ইহতিমাম করুন।
ক্স হাতীমে কাবায় নামাযের ক্ষেত্রে বেশ ভিড় থাকে। ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। এ ক্ষেত্রে উত্তম হল আপনি হাতীমে কাবায় ঢুকে দরজার আশেপাশে থাকবেন না। বরং একেবারে ভিতরে ঢুকে যাবেন। তাহলে ধাক্কা দিলেও সহজে বের হবেন না।

সাফা-মারওয়া পাহাড়ে সায়ী

ক্স প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় তলা দিয়েও সায়ী করা যায়।

ক্স অনেকের জাবালে নূর ও জাবালে সাওরে উঠার ইচ্ছে থাকে। মনে রাখতে হবে তা কোন সাওয়াবের কাজ নয়। তবে নবী কারীম এর মুহাব্বতের পরিচায়ক। তাই আপনার শরীরের অবস্থা ভাল থাকলে এ হিম্মত করুন অন্যথায় নয়। কারণ যদি এ অতিরিক্ত কাজ করে মূল হজ্বের সময় অসুস্থ থাকেন তাহলে পুরো সফরই বৃথা হয়ে যাবে। তাই বিষয়টি গুরুত্ব দিন।
ক্স যদি হজ্বের আগে আপনার বেশি থাকা হয় আর হজ্বের পর পরই ফ্লাইট হয় তাহলে আগে উঠুন। আর যদি হজ্বের পরে বেশি থাকা হয় তাহলে অবশ্যই পরে উঠুন।
ক্স উঠার ক্ষেত্রে অবশ্যই এ নিয়মটি মানুন তাহলে অনেক সহজ হবে সময়ও কম লাগবে Ñ তা হলÑবাইতুল্লাহতে ফজরের নামায আদায় করে সাথে সাথে গাড়ী নিয়ে জাবালে নূরে চলে যান ও ভোরে ভোরে উঠুন তাহলে খুব সহজ ও আরামদায়ক হবে। সূর্য উঠার পর উঠলে অনেক কষ্ট হবে।
ক্স জাবালে সাওরেও উঠার ক্ষেত্রে উপরোক্ত নিয়মটি অনুসরণ করুন।
ক্স ঘুরার জন্য যাবার ক্ষেত্রে সরকারী টেক্্িরগুলোর চাইতে যদি মালিকানা কোন গাড়ী ওয়ালা পাওয়া যায় তাহলে ভাড়া কম হবে। আর এ গাড়িগুলো সাধারণত সাফা-মারওয়ার পাশের আবু জাহলের বাড়ীর পরের মেইন রোডের কাছে বেশি থাকে। এখানে খোঁজ করলে তা বেশি পাওয়া যাবে। এতে ভাড়া কম ও নিরাপদ।
ক্স তায়েফ যাওয়ার ইচ্ছে থাকলে মক্কায় পৌছেই খবর নিন ঐ সময় তায়েফ যাওয়ার অনুমতি আছে কি না? বা কখন থেকে নিষেধাজ্ঞা হবে। সে সময় অনুযায়ী বের হোন ও ঘুরে আসুন। এ ক্ষেত্রেও সধারণ মালিকানার গাড়ী পেলে ভাল হবে। যাওয়া ও ভাড়া দুটোতেই সুবিধা হবে।
ক্স মক্কায় একটি মিউজিয়াম রয়েছে। যার নাম ‘‘কিসওয়া কাবা’’ অন্যান্য জায়গার মত সেখানেও যাওয়ার অবকাশ রয়েছে। এবং দেখে শিক্ষা নেয়ার সুযোগ আছে।

ক্স হজ্বের পাঁচদিনের মধ্যে ৩ দিন বেশি চলতে হয় তাই আপনার সাথে কোন মহিলা বা পুরুষ যদি অধিক মাজুর হন, অর্থাৎ চলায় অপারগ হন তাহলে তার জন্য একটি হুইল চেয়ার ভাড়া বা ক্রয় করে নিন। অন্যথায় পেরেশান হবেন। তাই মক্কায় পৌঁছেই ্এর খোঁজ করুন। এ ক্ষেত্রে পুরাতন গাড়ীও কিনতে পাওয়া যায়।
ক্স হজ্বের কার্যদি শুরু হলে সকল ক্ষেত্রে ধীরতা ও অন্যদের প্রাধান্য দেয়ার মানসিকতা জাগ্রত করুন।
ক্স হজ্বের কার্যাদির ক্ষেত্রে নিজ মুয়াল্লিমের পূর্ণ অনুসরণ করুন। এ ক্ষেত্রে অন্যের কথা না মানা বাঞ্চণীয়।

মিনা

ক্স মীনার তাঁবু লক্ষ রাখবেন। কত নাম্বার তাঁবু, কত নাম্বার রাস্তা, কোন পাহাড়র নিচে এবং কোন পাহাড়ের পাশে। তাহলে কখনও মীনাতে হারিয়ে গেলে নিজে নিজেই খুঁজে বের করতে পারবেন।
ক্স মিনায় বাথরূমের স্বল্পতা। তাই সম্ভব হলে ইস্তেঞ্জার জন্য এমন সময় বেঁছে নিন যখন ভিড় কম হয়। যেমন: তাহাজ্জুদের অনেক আগে ফজরের পর পর, ৯টাÑ১১টা, যে কোন নামাযের পর পর ইত্যাদি সময়।
ক্স সম্ভব হলে মিনায় শুকনা খাবার গ্রহণ করুন।

আরাফাহ-এর ময়দান
ক্স মদীনায়ও মক্কায় ন্যায় মাগরিবের পূর্বে মেহমানদারীর ব্যবস্থা আছে। তা গ্রহণ করতে পারেন। নিজেও মেহমানদারী করার চেষ্টা করুন।
ক্স মদীনায় মসজিদের তৃতীয় তলায় বিশাল লাইব্রেরী রয়েছে। তা না দেখলে আফসোস থাকার কথা। তাই সেখানে গিয়ে দেখে আসুন।
ক্স মদীনায় মসজিদে নববীর পাশে অনেক সময় সবকারীভাবে বিভিন্ন ইসলামী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তা দেখলে অনেক আশ্চয্যকর বস্তু সামনে আসে। সময় থাকলে সেগুলোও দেখা যেতে পারে।
ক্স মদীনায়ও জুতা ব্যাগে করে নিজের কাছে রাখুন। অন্যথায় বক্সে রাখলে ভালভাবে চি‎িহ্নত করুন। না করলে হারিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকবে।
ক্স মদীনায় মসজিদে নববীতে নামায পড়ার বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কিছুতেই অতি মাজুর না হলে বাসায় নামায আদায় করা যাবে না।
ক্স মদীনাতেও বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তা মুয়াল্লিমের সাথে পরামর্শ করে যাওয়ার দিন ঠিক করে নিন।
ক্স আপনার সাথে থাকা বৃদ্ধ বাবা মাকে বা স্ত্রী, বোনকে শিখিয়ে রাখবেন যে, হারিয়ে গেলে যেন মদীনার কোন টয়লেট ৪/ ৫/ ৬নং এর কাছে চলে আসে বা অন্য কোন স্থান ঠিক করে রাখুন যাতে হারিয়ে গেলে সেখান থেকে পাওয়া যায়।

রওযা শরীফ যিয়ারত, রিয়াজুল জান্নাহ ও জান্নাতুল বাকী

ক্স প্রতিদিন একাধিক বার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর-কবরে সালাম প্রেরণ করুন। এখানেও অবশ্যই ছবি তোলা থেকে বিরত থাকুন।
ক্স জিয়ারত শেষে কাবা শরীফের দিকে ফিরে দোয়া করুন। এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
ক্স রিয়াজুল জান্নাতে নিয়মতান্ত্রিক নামায পড়–ন। তবে এছাড়াও একটি সুযোগ আছে যাতে বেশি সময় ও লাইন ধরা ছাড়া নামায পড়া যায়। তা হল নামাযের সময়ে সেখানেও জামাত হয়। তাই যে কোন নামায তার ভিতরে পড়লে আপনি সহজেই রিয়াজুল জান্নাতের সুবিধা পেয়ে যাবেন।
ক্স মদীনার কবরস্থান জান্নাতুল বাকী প্রায় প্রত্যেক নামাযের পরপর খোলা হয় এবং ২০-৩০মিনিট পর বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে অবশ্যই দৈনিক ১-২ বার যিয়ারত করুন।

ফিরে আসা

ক্স ল্যাগেজে যমযমের পানি নিয়ে আসা যায়। তবে অবশ্যই মুখে কস্টিপ ভাল করে পেচিয়ে নিবেন। তাহলে পানি মুখ দিয়ে ঘামাবে না।
ক্স ছুরি, নেলকাটার, প্লেট, রেজারসহ লৌহজাত বস্তু বিমানে সাথে রাখা নিষেধ। তা অবশ্যই ল্যাগেজে দিন। অন্যথায় তা বিমানবন্দরে রেখে দিবে।
ক্স একটি ব্যাগ পিঠে আর দুইটি দুই হাতে নিয়ে আপনি আসতে পারবেন। তাই সাধারণ বস্তুগুলো এ ব্যাগগুলোতে রাখুন। দামী মাল যেমন: স্বর্ণ, মোবাইল ইত্যাদি নিজের সাথে গোপন পকেটে বা বুকের ব্যাগে রাখুন।
ক্স দেশে ফিরে অবশ্যই বাসায় প্রবেশের আগ পর্যন্ত যাদের সাথে দেখা হবে তাদের নিয়ে দোয়া করুন।
ক্স হজ্বের পর চল্লিশ দিন ঘর থেকে বের হওয়া যায় না এমন কথা ঠিক নয়। তাই এটা বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকুন।
ক্স ল্যাগেজ ভালভাবে রশি দিয়ে বাঁধুন। ও চি‎িহ্নত করুন। বিমান বন্দরে যমযমের পানিতে মার্কার দিয়ে চারপাশে কয়েক জায়গায় লিখুন তাহলে এয়ারপোর্টে পেতে সুবিধা হবে।

ক্স নিজের ল্যাগিজে অবশ্যই এমন চি‎হ্ন রাখতে হবে যাতে সহজেই নিজের ব্যাগ সনাক্ত করা সম্ভব হয়। এ ক্ষেত্রে ল্যগিজে ভিন্ন কালি দিয়ে লিখা, কাপড়ের টুকরা চারপাশে বেঁধে দেওয়া বা অন্য কোন উপায়ে হতে পারে।
ক্স আপনি যদি কলিকাতার ছাপা ছাড়া অন্য ছাপার কুরআন পড়তে না পারেন তাহলে সেটাই এক কপি সাথে নিয়ে নিবেন। কারণ সেখানে নূরানী ছাপা ও সাউদী ছাপার কুরআন ছাড়া অন্য কোন ছাপার কুরআন শরীফ পাওয়া যায় না।
ক্স কোন কোন সময় তায়াম্মুম এর প্রয়োজন হয়। তাই দেশ থেকেই তা শিখে নেন।
ক্স সম্ভব হলে মুয়াল্লিমকে বলে সউদী এয়ারলাইন্সে টিকেট কাটাবেন। কারণ তারা খিদমত ভাল করে ও পণ্য বেশি বহন করার অনুমতি দেয়।
ক্স আপনার পাসপোর্টের একটি ফটোকপি সাথে রাখুন তাতে যে কোন সমস্যায় কাজে লাগবে।
ক্স প্রয়োজনীয় ঔষধের সাথে ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি, পেটব্যাথা, পেটখারাপের ঔষধও নিয়ে নিন। বেশি করে ওরস্যালাইন নিয়ে নিন।
ক্স মক্কায় ও মদীনায় প্রচুর জালালী কবুতর রয়েছে। সকলে তাদেরকে খাবার দেয়। আপনারও দিতে মন চাইবে। ঐ খাবারগুলো আসলে এদেশের গম ও কাউন ইত্যাদি। সেখানে অনেক দামে কিনতে হবে। সম্ভব হলে এখান থেকে ২/৩ কেজি নিয়ে নিবেন। তাহলে দিতে সুবিধা হবে।
ক্স ঠোট প্রচুর পরিমান টানে তাই অবশ্যই ঠধংষরহ নিয়ে নিবেন। চাইলে বেশি করে নিয়ে সবার খেদমতও করতে পারবেন।
ক্স একজন হাজীকে দেখেছি বাড়ী থেকে কিছু মরিচ, ছোট লেবু, শুকনা ভর্তা করে নিয়ে গেছে এবং ফ্রিজে রেখে রেখে খেয়েছে। কেউ চাইলে তা করতে পারে।
ক্স কমপক্ষে ৪টি সুরাহ সহীহ শুদ্ধভাবে মুখস্ত করে নিন। যাতে আল্লাহর ঘরে গিয়ে সহীহভাবে নামায পড়তে পারেন।
ক্স যে দোয়াগুলো সচরাচর শুনে আসছেন তা ভালভাবে মুখস্থ করে নিন। যাতে বিভিন্ন সময় পড়তে পারবেন ও বলতে পারবেন।
ক্স বিমানে নামাযের জন্য কখনও তায়াম্মুম করা লাগে তাই সাথে এশটি মাটির ছোট টুকরা রাখুন।

বাংলাদেশ এয়ারপোর্ট বা হাজ্বীক্যাম্প

ক্স বিমান + এয়ারপোর্ট + হাজ্বী ক্যাম্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পরিমান টয়লেট পেপার সাথে নিয়ে নিন। যাতে প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন। অনেক সময় এ স্থানগুলোতে টয়লেট পেপার পাওয়া যায় না।
ক্স বিমানে সব মালপত্র দিবেন। তবে নিজের সাথে শুধু ইহরামের আরো এক সেট কাপড়, জুতা ও কিছু শুকনা খাবার নিয়ে নেন। যাতে আপনি অতি প্রয়োজনে খেতে পারেন।
ক্স যদি সরাসরি এয়ারপোর্ট যাওয়া হয় তাহলে সেখানে ২য় তলায় মসজিদ রয়েছে। সময়মত নামায আদায় করুন। এভাবে পুরো সফরের মধ্যে নিয়ত করুন যাতে এক ওয়াক্ত নামাযও কাযা না হয়।
ক্স বিমান বন্দরে ইহরাম বাঁধার জায়গা রয়েছে। সেখান থেকে ইহরাম সম্পন্ন করুন। বিমান কমপক্ষে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা চলার পর ইহরামের নিয়ত করুণ ও তালবীয়া পড়–ন।
ক্স এ স্থানগুলোতে প্রচুর পরিমানে বিড়ম্বনা হতে পারে। কখনও কখনও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে ৫/৬ ঘন্টাও লাগতে পারে। তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।

বিমান

ক্স বিমানে (বিশেষত সৌদী এয়ারলাইন্সে) কোন কোন সময় রুটি ও ভাত উভয়টি খাওয়ার ইচ্ছাধিন থাকে। আপনি ভাত নয়, রুটি খান। করণ ভাত আমাদের মত রান্না করা হয় না।

ক্স সৌদী মুয়াল্লিমের পক্ষ থেকে যে হাত বেল্ড দেয়া হয় প্রাথমিকভাবে তা পরে রাখা ভাল ও তাতে কলম দিয়ে নিজের মুয়াল্লিমের নম্বর ও হোটেল ঠিকানা লিখে রাখা ভাল। বিশেষত মহিলাদেও জন্য অধিক কার্যকর। তাতে হারানোর ভয় কম থাকে।
ক্স হোটেলে গরম পানি থাকে তাই অনেকের গোসলে বিরক্তি আসে। তাই আপনি হয়তো আগে থেকেই বালতিতে পানি ঢেলে রেখে ঠান্ডা করুন বা ফ্রিজের ডিপে পানি রেখে তা মিশিয়ে গোসল করুন। ভাল লাগবে।

মক্কা শরীফে অবস্থান

ক্স মসজিদে হারামে অবশ্যই জুতা বাক্সে রাখা যাবে না। কারন এতে কোনো নিশ্চয়তা নাই। কিছুক্ষণ পর পর খাদেমরা তা পরিস্কার করতে থাকে। তাই জুতা নিজের কাছে ব্যাগে রাখতে হবে।
ক্স মসজিদে হারামে সবচেয়ে সাওয়াবের কাজ হল তাওয়াফ। তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ৫ টি তাওয়াফ করুন। অনেক সাধারণ মানুষও দৈনিক ১০/১২টি তাওয়াফ করার প্রমাণ রয়েছে।
ক্স মক্কায় যতদিন থাকবেন বেশি বেশি তাওয়াফ করুন। যমযমের পানি পান করুন। একাধিক উমরার চাইতেও তাওয়াফ বেশি করার কথা উলামায়ে কেরাম বলেছেন।
ক্স প্রতিদিন আসরের পূর্বে প্রবেশ করে এশার পর বাইতুল্লাহ থেকে ফিরুন। এ সময় অন্যান্য ইবাদতের সাথে একাধিক তাওয়াফ করুন। হিম্মত করলে সহজেই ৫টি তাওয়াফ এ সময়ে করা যাবে। আসরের পর, মাগরিবের পর ২টি, এশার পর ২টি। এ দীর্ঘ সময় পেশাব-পায়খানার প্রয়োজন হলে জমজম টাওয়ারের দিকে না এসে, অপর দিকে তথা সাফা-মারওয়ার দিকে যান। তাতে সহজে আবার বাইতুল্লায় ফিরে আসতে পারবেন।
ক্স মাগরিবের পূর্বে কিছু খেতে অনেকেরই মন চায়। কিন্তু জানা নাই যে আল্লাহর ঘরেই এ মেহমানদারীর আয়োজন হয়ে থাকে। হজ্বের সময় প্রতিদিন, আর অন্যান্য সময় সোম ও বৃহস্পতিবারে মাতাফে (তাওয়াফের স্থানে) মাগরিবের পূর্বে রোজাদার ও সাধারণদের জন্য নাস্তার আয়োজন হয়ে থাকে। এতে খেজুর, রুটি, হালুয়া, জয়তুনসহ বিভিন্ন আইটেম থাকে। আপনিও সেই মেহমানদারী গ্রহণ করতে পারেন। মাগরিবের পর পর চা, গাহওয়া, যানযাবীল তিন প্রকারের (চায়ের) পানীয়র ব্যবস্থা থাকে। আপনিও সেই মেহমানদারী গ্রহণ করুন ও ইবাদতে লিপ্ত হন। সম্ভব হলে নিজেও অন্যকে মেহমানদারী করান।
ক্স হজ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর প্রতি ধেয়ান-খেয়াল এবং অন্যদের থেকে নিজেকে পরিপূর্ণ আড়ালে রেখে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখা। তাই অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই মোবাইলের সর্বদা ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। আমাদের পরিপূর্ণ অভিজ্ঞতা যে, মোবাইলের অযথা ব্যবহারের কারণে অনেকে হজ্বের বরকত থেকে মাহরূম থেকে খালি হাতেই মক্কা থেকে ফিরে আসছে। তাই ভিডিও করা, ভিডিও কল করা, ফেসবুক, ইমো, হরসআপ, টুইটার ইত্যাদি চালানো, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি থেকে অবশ্যই নিজেকে বিরত রাখুন। এবং সর্বদা অতি প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ব্যবহার থেকে অবশ্যই বিরত থাকুন। আপনাদের হাতে পায়ে ধরে বলতে চাই, শুধু এই মোবাইলই অনেকের হজ্ব ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই অবশ্যই সম্ভব হলে মোবাইল পরিত্যাগ করুন। একান্ত প্রয়োজন হলে মাল্টিমিডিয়া হ্যান্ডসেট না নিয়ে সাধারণ মোবাইল ব্যবহার করুন। মাল্টিমিডিয়া নিলেও ভিডিও করা থেকে বিরত থাকুন।
ক্স মাঝে মাঝে মক্কা এবং মদীনার সকল তলায় ঘুরে দেখুন এবং সেখানের কার্যক্রমগুলো বুঝার চেষ্টা করুন। দোতলা, ৩য় তলা, ছাদ, মসজিদে হারামের লাইব্রেরীতে ও হারামাইনের নীচের আন্ডারগ্রাউন্ডের রাস্তা যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং এর কার্যক্রম অনুধাবণ করুন। যাতে হারাম শরীফের সকল কার্যক্রমের সাথে আপনার আত্মীক সম্পর্ক গড়ে উঠে। ও দ্বীনী অভিজ্ঞতা জন্ম নেয়।
ক্স সাফা থেকে মারওয়া পাহাড়ে গেলে ১ বার হবে। অনেকে মনে করে সাফা থেকে মারওয়া ও মারওয়া থেকে সাফায় আসলে ১ বার পূর্ণ হল। তা ঠিক নয়। নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন ও খেয়াল রাখুন।

মসজিদে হারামে নামায

ক্স মক্কা বা মদীনায় থাকাকালীন অবশ্যই নামায যাতে হোটেলে না পড়া হয় তা নিজের জন্য বাধ্যতামূলক করে নিতে হবে। অনেকে গাফেল হয়ে এ মহা সওয়াব থেকে বিরত থাকে। বিষয়টি মোটেও সুন্দর নয়।
ক্স অনেকে মাঝখানে দীর্ঘ ফাঁকা রেখে কবুতর চত্তর ইত্যাদি জায়গা থেকে ইক্তেদা করে থাকে। এ নামায আমাদের নিকট সহীহ হবে না। তাই অবশ্যই তা পরিত্যাগ করতে হবে। অন্যরা ইক্তেদা করলেও তা তার নিজের ব্যাপার। আপনি করবেন না।
ক্স শুক্রবারে জুমার নামায কাবা শরীফের পাশে ইমাম সাহেবকে দেখে পড়ার চেষ্টা করুন। ইমামের খুৎবা দেখার চেষ্টা করুন। এর জন্য অবশ্যই আপনাকে অতি দ্রুত পবিত্রতা অর্জন করে মসজিদের হারামের মাতাফে আসতে হবে। ১০/১১টার মধ্যে মাতাফে ঢুকে পড়–ন এবং পরবর্তীতে ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন হলে জমজম টাওয়ারের দিকে না গিয়ে সাফা-মারওয়ার সাথের বাথরুম ব্যবহার করুন। কারণ ঐ দরজাগুলো অনেক আগে বন্ধ করে দেয়া হয়। সর্বোত্তম হল এ দিন সকাল থেকে পানাহার সংযত রাখুন তাতে পেশাবের বেগ কম হবে।

জমজমের পানি

ক্স মসজিদ থেকে জমজমের পানি নিয়ে এসে হোটেলে থাকা কালীন পান করবেন। যাতে সফরের বেশিরভাগ সময় যমযমের পানি পান করা যায়।
ক্স মসজিদের হারামে জমজমের পানি অতি ঠান্ডা পান করবেন না। এতে ঠান্ডা লাগার খুব সম্ভাবনা থাকবে। নরমাল ও ঠান্ডা মিলিয়ে পান করুন। যে জারে সবুজ কালির লেখা আছে তার পানি নরমাল। তা খেয়াল রাখতে হবে।
ক্স মসজিদে হারামের বাহিরে কেবল মসজিদের দেয়াল ঘেঁষে লাগানো যমযমের পানি রয়েছে। এ ছাড়া বাহিরে যে পানি রয়েছে তা যমযম মনে করে খাওয়া যাবে না। তা শুধুই ঠান্ডা পানীয়। আরবী ও ইংরেজীতে লিখা রয়েছে। বিষয়টি বুঝে রাখতে হবে।

টয়লেট

ক্স টয়লেটসহ সকল স্থানে ওজু ও গোসলের পানি গরম থাকে বিষয়টি মাথায় রেখে তা ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকুন।
ক্স পবিত্র মক্কা ও মদীনায় টয়লেটে নীচের দিকে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলা রয়েছে। সেখানে ভীড় তুলনা মূলক কম। তা ব্যবহার করলে বিড়ম্বনা হবে না।

মক্কা শরীফের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান

ক্স আরাফার ময়দানে অনেকে ফ্রী খাবারের তালে পড়ে এমন মহিমান্বিত দিনের পুরো বরকত নষ্ট করে। হাদীস শরীফে আছে “হজ্ব আরাফাই”। তাই এ দিনে ফ্রী খাবারের পিছনে পড়া থেকে বিরত থাকুন। আমরা এমন অনেককে দেখেছি যারা খাবার গ্রহণের জন্য একবারও বের হননি। তাই এটাই অনুরোধ আপনি আপনার পুরো সময় দোয়া, কান্নাকাটি ও অন্যান্য ইবাদতে কাটাবেন। এমন একটি সময় ফ্রী খাবারের পিছনে দিয়ে নষ্ট করার কোন কারণ বুঝে আসে না।
ক্স আরাফার ময়দানে সবাই তাবুতে বসে দোয়া করে আপনি তাবু থেকে বের হয়ে খালি মাঠে গাছের ছায়ায় এসেও কিছু সময় দোয়া কান্নাকাটিতে লিপ্ত থাকুন। বেশ ফযিলত অর্জন হবে।
ক্স আরাফার ময়দানে মোবাইলে কথা কম বলুন। কারণ মিনাতে ফিরতে মোবাইল লাগতে পারে। মিনাতে ফিরার সময় দলবদ্ধ থাকা ও তাঁবু খুঁজে বের করতে সমস্যা হতে পারে।
ক্স আরাফার ময়দানে বিকেলে পানি কম খেতে চেষ্টা করুণ। প্রয়োজনে অল্প পানি সাথে বহন করুন। ফেরার পথে লাগলে পান করবেন।

পাথর মারা

ক্স মিনায় পাথর মারার ক্ষেত্রে তৃতীয় তলা ব্যবহার করুন। এবং মূল স্থানটির শেষ প্রান্তে গিয়ে পাথর মারুন। কারণ দেখার সাথে সাথে সবাই মারতে চায় তাই প্রত্যেকটির শুরুতে ভীড় হয়। শেষে ভিড় থাকে না। তাই শেষ প্রান্তে গিয়ে পাথর মারুন। নিচের চিত্রটি লক্ষ করুন ও খেয়াল রাখুন :

কুরবনী
ক্স ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে নিজেরাই বা মুয়াল্লিমের মাধ্যমে কুরবানী করা ভাল। এবং এ ব্যাপারে কারো উপর সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন প্রত্যেকের হিসাব সে দিবে। আপনার দায়িত্ব আপনি আদায় করুন।
ক্স নিজেরা করলে মোবাইলে কুরবানীর সময় জেনে নিন ও মাথা মু-ানোর প্রস্তুতি নিন। আর ব্যাংকে দিলে তাতে উল্লে্িরখত সময় থেকে কিছু পরে মাথা মু-ান। এটাই সতর্কতা।
মাথামু-ন
ক্স নিজেদের মধ্যে ভালভাবে মাথা মু-ানোর কেউ না থাকলে সেলুনে কাটাই ভাল। তবে এ ক্ষেত্রে দাম করে কাটুন। অনেকে ১০ দিরহাম চেয়ে বসে। অথচ আপনি দাম করলে ৩ দিরহামে কামাতে পারবেন।
ক্স তেমনি মক্কায় উমরার পর মাথা কামানোর ক্ষেত্রে ১০ দিরহাম চেয়ে বসবে। আপনি দামাদামি করলে বা একটু দুরে গেলে ৫ বা ৩ দিরহামে কামাতে পারবেন।
ক্স হজ্বের কোন কাজ, বিষয়, মাসয়ালা ও স্থান সম্পর্কে আপনার জানার প্রয়োজন হলে যে কোন সময় আমাদের ফোন করুন। (মুফতী) মামুনুর রশীদ। মোবা : ০১৯১৮১৪১৮১৯

ক্স মদীনায় যাওয়ার শুরু থেকে বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়–ন। আগে থেকেই তা মুখস্ত করার চেষ্টা করুন ও রাওযা শরীফে সালাম দেয়ার আরবী বাক্যগুলোও মুখস্ত করুন।
ক্স মদীনায় যাওয়ার সময় নিজের সকল সামান নিয়ে যান। একান্ত কাছের মানুষ না হলে ব্যাগ, কাপড় ইত্যাদি সামান রেখে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
ক্স মদীনায় বাসা যেখানেই হোক তা নিয়ে বিতর্কে জড়ানোর দরকার নাই। কারন সেখানে শুধু কাজ নামায ও যিয়ারত। তাতে বাসা দূরে বা কাছে হওয়াতে বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু বিতর্কে হজ্ব নষ্ট হয়ে যায়। তাই বিষয়টি খেয়াল রাখুন।

ক্স আসার সময়ও এয়ারপোর্টে প্রচুর পরিমানে বিড়ম্বনা হতে পারে। কখনও কখনও আনুষ্ঠানিকতা শেষ হতে ৫/৬ ঘন্টাও লাগতে পারে। তার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।
ক্স হজ্বের পর তা ধরে রাখার জন্য পূর্ণ চেষ্টা করুন। নামায নিয়মিত পড়–ন। হালাল-হারাম বেঁছে চলুন। কবীরা গুনাহমুক্ত জিন্দেগী গড়–ন।

কেনাকাটা

ক্স অনেকে হজ্বের মধ্যে কেনাকাটাকে নিষেধ করে এবং এতে হজ্বের বরকত চলে যায় বলে মত দেয়। আসলে বিষয়টি এমন নয়। একজন হাজ্বী হজ্বের নিয়তে যাবে। কেনাকাটার নিয়তে যাবে না। তবে হজ্ব উমরা যথাযথভাবে সম্পাদন করার পর কিছু কেনাকাটা করার অবকাশ আছে। তবে এজন্য বাজারে ঘুরবে না। বা জরুরী সময় নষ্ট করবে না।
ক্স একমাত্র হজ্বের নিয়তে গিয়ে হজ্বের আগে বা পরে কিছু ক্রয় করা বৈধ। তবে মক্কা থেকে না কিনে মদীনা থেকে কিনুন। বেশির ভাগ পন্য মক্কার চাইতে মদীনায় সস্তা পাওয়া যায় বলে সকলের অভিজ্ঞতা।
ক্স মদীনায়ও দুই ধরণের দোকান রয়েছে। একটি খুচরা, একটি পাইকারী। বেশি কিনলে পাইকারী দোকান থেকে কিনুন। অনেক সস্তা পাওয়া যায়।
ক্স মোবাইল, কম্পিউটার, লাইট ইত্যাদি ইলেকট্রনিক্র পন্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই কোন নামকরা শো-রুম থেকে কিনুন। লোকাল দোকান থেকে ক্রয়ে প্রতারণার শিকার হওয়াই স্বাভাবিক।
ক্স অনেকে আসার সময় কাঁচা খেজুর ক্রয় করে থাকে। তা খুচরা দোকান থেকে না কিনে পাইকারী দোকান থেকে ৩ বা ৪ কেজির কার্টুন কিনলে অর্ধেক মূল্যে পাওয়া যাবে। মক্কা বা মদীনায় পাইকারী বাজার আছে সেখান থেকে কিনুন।
ক্স বিভিন্ন পন্যতে হজ্বের মওসূমে অফার দেয়া থাকে। যেমন একটি কিনলে অপরটি ফ্রি দেয় বা মূল্য কমিয়ে রাখে। তাই এমন সুযোগ গ্রহণ করা যাবে ও বুঝে-শুনে কেনা গেলে সহজ হবে।

হজ্ব গাইড

গ্রন্থনায় : আরহাজ্ব মুফতী আবু মুহাম্মাদ মানুনুর রশীদ
বিভাগীয় প্রধান, ফাতওয়া বিভাগ, দেওভোগ মাদরাসা, না:গঞ্জ
খতীব,বাইতুর রহমত জামে মসজিদ, রহমতনগর, সিদ্ধিরগঞ্জ, না:গঞ্জ
পরিচালক, িি.িরংষধসরপয়ঁবংঃরড়হং.ড়ৎম (প্রশ্নোত্তরে ইসলামী বিধি-বিধানের বাংলা একমাত্র ওয়েব সাইট)
আলহাজ্ব মিসবাহুল আলম রাসেল
পরিচালক, কিউব প্যাক ও জেড প্যাক, শাওন টাওয়ার, পল্টন

যোগাযোগ : ০১৯১৮১৪১৮১৯