মুসলিম জাতির পরিচয়

প্রশ্নঃ তুমি কে?
উত্তরঃ আমি মুসলমান।
প্রশ্নঃ মুসলমানের ধর্মের নাম কী?
উত্তরঃ ইসলাম।
প্রশ্নঃ ইসলাম কী শিক্ষা দেয়?
উত্তরঃ ইসলাম এই শিক্ষা দেয় যে, আল্লাহ তাআলা এক, উপাসনার উপযুক্ত তিনিই, হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার বান্দা ও রাসূল এবং কোরআন শরীফ আল্লাহ তায়ালার কিতাব। ইসলাম সত্য ধর্ম। ইসলাম দ্বীন এবং দুনিয়ার সার্বিক কল্যাণ এবং ভাল কাজ শিক্ষা দেয়।
প্রশ্নঃ ইসলামের ভিত্তি কয়টি বস্তুর উপর?
উত্তরঃ ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বস্তুর উপর।
প্রশ্নঃ ঐ পাঁচটি বস্তু, যেগুলোর উপর ইসলামের ভিত্তি রয়েছে, সেগুলো কী?
উত্তরঃ ঐ পাঁচটি বস্তু এইঃ ১. কালেমা তাইয়্যিবাহ অথবা কালিমায়ে শাহদাত মর্মার্থকে আন্তরিকভাবে মেনে নেয়া এবং তা মুখে স্বীকার করা ২. নামায আদায় করা। ৩. যাকাত দেয়া ৪. রমযান শরীফের রোযা রাখা। ৫. হজ্ব পালন করা।
প্রশ্নঃ ইসলামের কালিমা কী?
উত্তরঃ ইসলামের কালিমা এই-
لاَ اِلهَ اِلاَّ اللهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللهِ
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা ব্যতিত ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তাআলার রাসূল।
এ কালেমাকে কালেমায়ে তাইয়্যিবাহ এবং কালেমায়ে তাওহীদ বলা হয়।
প্রশ্নঃ কালেমায়ে শাহাদাত কী?
উত্তরঃ কালেমায়ে শাহাদাত এইঃ
اَشْهَدُ اَنْ لاَ اِلهَ اِلاَّ اللهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَ رَسُوْلُهُ
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তাআলার বান্দা এবং তার রাসূল।
প্রশ্নঃ ঈমানে মুজমাল কী?
উত্তরঃ ঈমানে মুজমাল এইঃ
امَنْتُ بِاللهَ كَمَا هُوَ بِاَسْماَئِه وَصِفَاتِه وَقَبِلْتُ جَمِيْعَ اَحْكَامِه
অর্থঃ আমি ঈমান এনেছি আল্লাহ তাআলার উপর; যে রকমভাবে তিনি তাঁর নিজ নামসমূহ এবং গুণাবলির সাথে রয়েছেন এবং আমি তাঁর সকল বিধান গ্রহণ করলাম।
প্রশ্নঃ ঈমানে মোফাচ্ছাল কী?
উত্তরঃ ঈমানে মোফাচ্ছাল এই ঃ
امَنْتُ بِاللهَ وَ مَلئِكَتِه وَكُتُبِه وَرُسُلِه وَ الْيَوْمِ الْاخِرِ وَالْقَدْرِ خَيْرِه وَشرِّه مِنَ اللهِ تَعَالى وَالْبَعْثِ بَعْدَ الْمَوْتِ
অর্থঃ আমি ঈমান এনেছি আল্লাহ তাআলার উপর; এবং তাঁর ফেরেশতাগণের উপর, তাঁর কিতাবসমূহের উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর, কিয়ামতের দিনের উপর এবং এই বিষয়ের উপর যে, ভাল মন্দ তাকদীর আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়, আর মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হওয়ার উপর।
প্রশ্নঃ তোমাদেরকে কে সুষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ আমাদের এবং আমাদেও মাতা-পিতা, আসমানসমূহ, যমীনসমূহ এবং সমস্ত সৃষ্টজীবকে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন।

Posted in uncatagorized | Comments Off on মুসলিম জাতির পরিচয়

বিবাহের দোয়া

ি বিবাহ হওয়ার পর এই দোয়া পড়িবে বা বিবাহিত ব্যক্তিকে এই দোয়া দিবে-
بَارَكَ اللهُ لَكَ وَ بَارَكَ اللهُ عَلَيْكَ وَجَمَعَ بَيْنَكُمَا فِيْ خَيْرٍ.
উচ্চারণ: বা’রাকাল্লাহু লাকা ওয়া বা’রাকাল্লাহু আলাইকা ওয়াজামায়া বাইনাকুমা ফী খায়রিন।
অর্থ: আল্লাহ পাক তোমাকে বরকতপূর্ণ করুন এবং তোমার উপর বরকত অবতীর্ণ করুণ এবং তোমাদের পরস্পরের মিলনকে মঙ্গল করুণ।
ি মেয়ে বিবাহ দিলে বিদায় দেয়ার পূর্বক্ষণে নিম্মলিখিত দু’আ পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে মেয়ের বুকে ও জামাতার বুকে মাথায় ও পিঠে ছিঁটিয়ে দিবে। দু’আ হচ্ছে ঃ

اَلّلهُمَّ اِنِّيْ اُعِيْذُهاَبِكَ وَذُرِّيَّتَهاَمِنَ اَلشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ

উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী উয়ীযুহা বিকা ওয়াযুররিয়্যাতাহা মিনাশ্ শাইত্ব-নির রাজীম।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি এই মেয়েকে এবং তাহার আওলাদকে বিতাড়িত শয়তান হইতে তোমার আশ্রয়ে দিতেছি।

ি বাসর রাতে স্ত্রীর কপালের উপরিস্থিত চুল ধরে বিসমিল্লাহ বলে এই দুআ পাঠ করা সুন্নাত-
اَللّهُمَّ إِنّيْ اَسْأَلُكَ خَيْرَهَا وَخَيْرَ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ, وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جُبِلَتْ عَلَيْهِ,
(উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরা মা যুবিলাত আলাইহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি হা ওয়া শাররি মা যুবিলাত আলাইহি)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ইহার কল্যাণ ও বরকত এবং ইহার স্বভাবের কল্যাণ ও বরকত কামনা করিতেছি এবং তাহার অনিষ্ঠ হইতে ও তাহার সৃষ্টিগত স্বভাবের অনিষ্ঠ হইতে পানাহ চাইতেছি।
ি সংগমের শুরুতে এই দোয়া পড়বে ঃ
بِسْمِ اللهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ و جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا.
উচ্চারণ ঃ বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শাইতানা ওয়া জান্নিবিশ শাইতানা মা রাযাকতানা।
অর্থ ঃ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে এই কাজ আরম্ভ করছি। হে আল্লাহ, শয়তানকে আমাদের থেকে দূরে রাখ এবং যে সন্তান তুমি আমাদের দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।
ি বীর্যপাতের সময় নি¤েœাক্ত দুআটি পড়বে ঃ
اللّهُمَّ لآ تَجْعَلْ لِلشَّيْطَانِ فِيْمَا رَزَقْتَنِيْ نَصِيْبًا.
উচ্চারণ ঃ আল্লাহুম্মা লা তাজআল লিশ্শাইতানি ফিমা রাযাকতানী নাসীবান।
অর্থ ঃ হে আল্লাহ, যে সন্তান তুমি আমাদেরকে দান করবে তার মধ্যে শয়তানের কোন অংশ রেখ না।

মুসাফাহা [করমর্দন] করার দু’আ
ি মুসাফাহা করার সময় এ দু’আ বলবে-
يَغْفِرُاللهُ لَنَا وَلَكُمْ
উচ্চারণ ঃ ইয়াগফিরুল্লাহু-লানা ওয়ালাকুম
অর্থ: আল্লাহ আমাকে ও তোমাকে ক্ষমা করে দেন।

মু’য়ানাকা [কোলাকুলি] করার দু’আ
ি মু‘য়ানাকাহ [কোলাকুলি] করার সময় উভয়ে এই দু’আ পাঠ করবে-
اَللَّهُمَّ زِدْ مُحَبَّتِيْ لِلِّهِ وَرَسُوْلِهِ
উচ্চারণ ঃ আল্লা-হুম্মা ঝিদ মুহাব্বাতী লিল্লা-হি ওয়া রাসূলিহী।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমার মুহাব্বত বৃদ্ধি কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের খাতিরে।
প্রধান শিরোনাম – ইসলামী সাধারণ জ্ঞান

Posted in গুরুত্বপূর্ণ দোয়া, বিবাহ | Comments Off on বিবাহের দোয়া

ইকামাতের সুন্নাতসমূহ

পাক-পবিত্র অবস্থায় ইকামাত দেয়া।
† কিবলামুখী হয়ে ইকামাত দেয়া।
† প্রথম চার তাকবীর একত্রে এক শ্বাসে বলে থামা এবং প্রত্যেক তাকবীরের শেষে সাকিন করা।
† অতঃপর মাঝের বাক্যগুলির মধ্য হতে দুই বাক্য একত্রে এক শ্বাসে বলে থামা এবং প্রত্যেক বাক্যের শেষে সাকিন করা।
† সর্বশেষে দুই তাকবীরের সাথে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু মিলিয়ে একত্রে এক শ্বাসে বলা এবং উভয় তাকবীরের শেষে সাকিন করা।
† ইকামাতেও আযানের ন্যায় ডান দিকে চেহারা ফিরিয়ে ‘হাইয়্যা আলাছ ছালাহ’ বলা। এরপর বাঁ দিকে চেহারা ফিরিয়ে “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলা। সীনা বা পা ঘুরবে না।
† আযানের জবাবের মত মুসল্লীদেরও ইকামাতের জবাব দেয়া। তবে ‘ক্বাদক্বামাতিস ছালাহ’ -এর জবাবে “أَقَامَهَا اللهُ وأَدَامَهَا” বলা। (আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা) বলা।
(সূত্র: নবীজীর (সাঃ) সুন্নাত)

Posted in ইকামাত | Comments Off on ইকামাতের সুন্নাতসমূহ

আযানের সুন্নাতসমূহ

ক্স পাক-পবিত্র অবস্থায় আযান দেয়া।
ক্স কিবলামুখি হয়ে আযান দেয়া।
ক্স প্রথম দুই তাকবীর এক শ্বাসে একত্রে বলে থামা।
ক্স অতঃপর দুই তাকবীর এক শ্বাসে একত্রে বলে থামা এবং উল্লেখিত তাকবীরসমূহের প্রত্যেকটির শেষে সাকিন করা, অর্থাৎ, “আল্লাহু আকবারুল্লাহু আকবার” এভাবে না বলা।
ক্স অতঃপর মাঝের বাক্যগুলীর মধ্য হতে এক একটি বাক্য এক শ্বাসে বলা এবং প্রত্যেক বাক্যের শেষে সাকিন করা ও থামা।
ক্স শেষের দুই তাকবীর এক শ্বাসে একত্রে বলে থামা ও উভয় তাকবীরের শেষে সাকিন করা।
ক্স সর্বশেষে লা-ইলা-হা-ইল্লাল্লাহ বলে আযান শেষ করা।
ক্স উল্লেখ্য যে, এক এক বাক্য বলে থামার পর এ পরিমাণ বিরতি দেয়া, যাতে পঠিত বাক্যটি একবার পড়া যায়; অর্থাৎ, শ্রোতাগণ যেন উক্ত সময়ে আযানের জবাব দিতে পারে।
ক্স ডান দিকে চেহারা ফিরানোর পর “হাইয়্যা আলাছ ছালাহ” বলা এবং বাম দিকে চেহারা ফিরানোর পর “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলা। কিন্তু বুক ও পা কিবলার দিক থেকে ফিরাবে না।
ক্স মহল্লার প্রথম আযান শ্রবণের সাথে সাথে শ্রোতাগণের তিলাওয়াত, জিকির, তাসবীহ ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়া।
ক্স আযানের শব্দগুলো ধীরে সুস্থে এবং ইকামতের শব্দগুলো তাড়াতাড়ি বলার কথা হাদিসে এসেছে। তাই এভাবে আযান ও ইকামাত দিবে।
ক্স আযানের জবাব দেয়া। অর্থাৎ, মুআজ্জিনের আযানের বাক্য উচ্চারণের ফাঁকে ফাঁকে শ্রোতাগণের হুবহু আযানের শব্দগুলোই বলা। তবে “হাইয়্যা আলাছ ছালাহ্” এবং “হাইয়্যা আলাল ফালাহ্” বলার পর জবাবে “লা- হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ” বলা। আর ফজরের আযানে “আছছালাতু খাইরুম মিনান নাঊম” এর জবাবে ‘সাদাকতা ওয়া বারারতা’ বলা।
ক্স আযানের শেষে দুরূদ শরীফ পড়া।
ক্স দুরূদ শরীফ পড়ার পর এই দোয়া পড়া-
اَلّهُمَّ رَبَّ هذِه الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلوةِ القَائِمَةِ اتِ مُحَمَّد الوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْه مَقَامًا مَّحْمُوْدَ الَّذِيْ وَعَدْتَّه اِنَّكَ لاَ تُخْلِفُ الْمِيْعَادَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহিদ্ দাওয়াতিত্ তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কায়িমাহ্, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাজিলাতা ওয়াবআস হু মাকামাম মাহমুদানিল লাজি ওয়াদতাহু, ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ।
(সূত্র: নবীজীর (সাঃ) সুন্নাত)

Posted in আযান | Comments Off on আযানের সুন্নাতসমূহ

হযরত সোলায়মান (আঃ) ও সাবার রাণী

একদা হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর দরবার স্বীয় প্রভাব প্রতিপত্তি ও জাঁকজমকের সাথে অনুষ্ঠিত হয়ে চলছিল। এ সময় তিনি জানতে পারলেন, “হুদহুদ” পাখীটি দরবারে অনুপস্থিত। তিনি বললেন, হুদহুদ পাখীটিকে যে দরবারে দেখতে পাচ্ছি না। যদি সে প্রকৃতই গ্রহনযোগ্য কোন কারণ ব্যতীত অনুপস্থিত হয়ে থাকে, তাহলে তার এ অপরাধ শাস্তিযোগ্য। এ অপরাধে আমি হয়তো তাকে কঠিন শাস্তি দিব অথবা জবাই করে ফেলব। নতুবা সে নিজের অনুপস্থিতির যৌক্তিক কোন কারণ পেশ করবে। কিছুক্ষণের ব্যবধানে হুদহুদ পাখিটি উপস্থিত হয়ে সুলায়মান (আঃ)-এর জিজ্ঞাসাবাদের জবাবে বলল, আমি এক সংবাদ নিয়ে এসেছি, যার ব্যপারে আপনি অবগত নন। তা হলো, ‘ইয়ামান’ এলাকায় সাবা সম্প্রদায়ের এক রানী রয়েছেন। আল্লাহ তা’য়ালা তাকে সব কিছু দিয়েছেন। সুখ-সমৃদ্ধি, আরাম-আয়েশ তথা বিলাসী জীবন যাপনের প্রয়োজনীয় কোন দ্রব্য সামগ্রীই তার অভাব নেই। তার রাজসিংহাসন স্বীয় বৈশিষ্ট্যে অত্যন্ত বৈশিষ্ট্যময়-জাঁকজমকপূর্ণ। সাবার রাণী ও তার সম্প্রদায় সূর্যপূজক। শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে রেখেছে। তাই তারা সমগ্র সৃষ্টি জগতের ¯্রষ্টা, বিশ্বপালক, এক-একক, লা শারীক আল্লাহর ইবাদত করে না।
‘হুদহুদ’ পাখীর এ ঘটনার উল্লেখে আল্লাহ তা’য়ালা কোরআন মাজিদে ইরশাদ করেন-ঃ
وتفقد الطير فقال مالي لاارالهدهد ام كان من الغائبين- لاعذبنه عذابا شديدا اولاذبحنه او لياتيني بسلطان مبين- فمكث غير بعيد فقال احطت بما لم تحط به وجئتك من سبا بنبا يقين-
অর্থঃ এবং সোলায়মান (আঃ) পক্ষীদের খোঁজ-খবর নিলেন, অতঃপর বললেন; কি ব্যাপার, হুদহুদ পাখিটিকে যে দেখছি না, নাকি সে কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেল? আমি তাকে কঠোর শাস্তি দেব অথবা জবাই করে ফেলব, নয়তো সে আমার নিকট কোন সুস্পষ্ট প্রমান উপস্থাপন করবে। অনন্তর কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ উপস্থিত হল, এবং বলল, আমি এমন বিষয় অবগত হয়ে এসেছি, যা আপনি অবগত নন। এবং আমি আপনার নিকট সাবা সম্প্রদায়ের সুনিশ্চিত সংবাদ এনেছি। (সূরা- নামল, আয়াত ঃ ২০,২১,২২)
স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, সোলায়মান (আঃ) হঠাৎ করে হুদহুদ পাখীর খোঁজ নিলেন কেন?এ প্রশ্নের উত্তরে কয়েকটি মতামতই পরিলক্ষিত হয়। কেউ কেউ বলেন- হযরত সোলায়মান (আঃ) নিয়মিত নিজবাহিনীর খোঁজ-খবর নিতেন। এরই অংশ হিসাবে হুদহুদের খোঁজ পড়ে। বিশেষত সংখ্যায় কম এবং দৈহিকভাবে দুর্বল, এমন শ্রেণীর খোঁজ খবরই তিনি একটু বেশি রাখতেন। তার বাহিনীতে হুদহুদ পাখীর সংখ্যাও কম এবং দৈহিক ভাবেও তারা ক্ষুদ্র-দুর্বল প্রজাতির, তাই বিশেষ ভাবে এদেরেই খোঁজ খবর নিতেন।
কেউ কেউ বলেন, সোলায়মান (আঃ) এর দরবারে যখন হুদহুদ পাখীর খোঁজ পড়ে তখন এক প্রান্তরে দরবার অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। এসময় পানির খোঁজ নেওয়ার জন্য হুদহুদের প্রয়োজন পড়ে। কেননা, এই পাখিটি ভূমির অতি গভীরে পানি থাকলেও খোঁজ দিতে পারত। সোলায়মান (আঃ) পানির খোঁজ নেওয়ার জন্য হুদহুদকে না পেয়ে মর্মাহত হন। তিনি ধারণা করলেন, পশুপক্ষিসহ সমগ্র জীবকুলকে আল্লাহ তা’য়ালাই তার অধীনস্থ করে দিয়েছেন। এটা তাঁর প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এখন হয়ত আমার কোন ত্রুটির কারণে সেটি অনুপস্থিত। এ ধারণাবশতঃ তিনি চিন্তা করে দেখলেন, আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহে কোন প্রকার অমর্যাদা হতে পারে, এমন কোন কর্ম তাঁর দ্বারা সংঘটিত হয় নি তো। তখনই তিনি বলে উঠলেন, অনুমতি ব্যতিরেকে অনুপস্থিত থাকা মহা অন্যায়। সুতরাং হয়ত হুদহুদ অনুপস্থিতির যুক্তি সঙ্গত কোন কারণ ব্যখ্যা করবে নয়ত আমি তাকে হত্যা করব। এসব কথা শেষ হতে না হতেই ‘হুদহুদ’ এসে সাবার রানীর কথা বিবৃত করে। সে সাবার রাণী এবং তার সম্প্রদায় সম্পর্কে বলল যে, তারা সূর্যের পূজক। শয়তান তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে আল্লাহর ইবাদত হতে বিমুখ করে রেখেছে।
সোলায়মান (আঃ) প্রথম দিকে হুদহুদের বক্তব্যকে আত্মরক্ষার কৌশল বলে ভাবলেন। তাই তিনি বললেন, তোমার কথিত সাবা সম্প্রদায় ও তথাকার রাণীর বিষয়ে সত্য-মিথ্যার পরীক্ষা এক্ষুণি হয়ে যাবে। নিজ বক্তব্যে সত্যবাদী হলে তুমি আমার এ চিঠি নিয়ে সাবার রাণীকে পৌঁছে দাও এবং এ চিঠি সম্পর্কে তারা কি বলাবলি করে তা শুন। হুদহুদ হযরত সোলায়মান (আঃ) এর চিঠি বহন করে নিয়ে সাবার রাণীর কোলের উপর ফেলে দেয়। রাণী তা পাঠ করে মর্ম অবগত হন এবং নিজ দরবারের সভাসদদেরকে বললেন, আমার নিকট একখানা সম্মানিত পত্র এসেছে। এই বলে তিনি পত্র প্রেরকের পরিচয় এবং পত্রের বিষয়বস্তু সংক্ষিপ্তাকারে বর্ননা করেন। হযরত সোলায়মান (আঃ) এর প্রেরিত এ পত্র এবং পত্রের প্রাপক সাবার রাণীর বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা আল-কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন:
قالت يايها الملؤا اني القي الي كتب كريم- انه من سليمن وانه بسم الله الرحمن الحيم ان لاتعلوا علي واتوني مسلمين-
অর্থঃ (পত্র প্রাপ্ত হয়ে) সে (রাণী)বলল, হে সভাসদবৃন্দ! আমার নিকট একখানা সম্মানিত পত্র নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এ পত্র ‘সোলায়মানের’ পক্ষ হতে এবং তাতে রয়েছেঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম; তোমরা আমার মোকাবেলায় অহংকার কর না এবং আমার নিকট আস অনুগত হয়ে।
(সূরা ঃ নামল, আয়াত ঃ ৩০)
রাণী সভাসদদেরকে পত্রের বিষয়বস্তু অবহিত করে তার করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ চাইলেন। তার সভাসদদের পরামর্শ কামনা এবং তাদের বক্তব্য কোরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে। এসম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেনঃ
قالت يايها الملئوا افتوني في امري ما كنت قاطعة امرا حتي تشهدون- قالوا نحن اولوا قوة والوا باس شديد و الامر اليك فانظري ماذا تامرين-
অর্থঃ সে (রানী) বলল, হে পরিষদবর্গ! এ ব্যাপারে তোমরা আমাকে পরামর্শ দাও, আমি কোন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনা যতক্ষণ না তোমরা আমার সম্মুখে উপস্থিত হও। তারা বলল, আমরা খুবই শক্তি শালী এবং যুদ্ধে পারদর্শী, আর (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) অধিকার তো আপনারই, সুতরাং যা কিছু আদেশ করতে হয় আপনিই স্থির করুন। (সূরা, নামল. আয়াত: ৩২-৩৩, পারা ১৯)
সাবার রাণীর পরামর্শ কামনার জবাবে তার সভাসদরা বলল, দেখুন, ভীত হবার কোন কারণ নাই। কেননা আমরা কোন দুর্বল জাতি নই, আর যুদ্ধবিদ্যা সম্পর্কেও অপারদর্শী নই। প্রয়োজনে পত্র প্রেরকের মুখোমুখি হবার শক্তি সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। অবশিষ্ট রইল এতদাসংক্রান্ত পরামর্শের ব্যাপার। এ ব্যাপারে আপনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সুতরাং যা আদেশ হয় করুন। পারিষদদের জবাবে রাণী বললেন, অবশ্যই আমরা শক্তিশালী, প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী। মোকাবেলার সামর্থও আমাদের রয়েছে, এটা যথার্থ। কিন্তু সোলায়মান (আঃ) এর ব্যাপারে আমাদের ত্বরিত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত হবে না। কোন প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে আমাদের তাঁর শক্তিসামর্থ ও প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন। কেননা যে আজব পন্থায় সোলায়মান (আঃ) পত্র আমাদের পর্যন্ত পৌছেছে, তা আমাদেরকে এ শিক্ষাই দিচ্ছে যে, তাঁর সম্পর্কে ভেবে-চিন্তে, বুঝে-শুনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা সমীচীন। এরপর রাণী কি করতে যাচ্ছেন তার বর্ণনা দিয়ে বললেন, আমি ইচ্ছা করছি তার দরবারে কয়েকজন দূত প্রেরণ করব। তারা সোলায়মান (আঃ) এর জন্য মহামুল্যবান উপহার সামগ্রী নিয়ে যাবে। প্রেরিত দূতরা উপহার সামগ্রী বহন করে নিয়ে যাবার ছলে সোলায়মান (আঃ) এর শক্তিমত্তা ও প্রভাব প্রতিপত্তির সম্পর্কে একটা ধারণা করতে পারবে এবং আমাদের কাছে তাঁর কাম্য বিষয় কি সে সম্পর্কেও অবগতি লাভে সক্ষম হবে। যদি তিনি অসীম শক্তিমত্তা ও প্রভাব পরাক্রমের অধিকারী বাদশাহ হয়ে থাকেন, তবে তাঁর সাথে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হওয়া নিরর্থক। কেননা প্রভাব, পরাক্রম ও শক্তিমত্তার অধিকারী বাদশাহর রীতি হচ্ছে, তারা বিজয়ীর বেশে কোন জনবসতিতে প্রবেশ করলে সে জনবসতিকে উজাড় বরবাদ করে ছাড়ে এবং তথাকার সম্মানী নাগরীকদেরকে অপমান অপদস্থ করে। সুতরাং এরূপ ক্ষতি বরণ করে নেবার কি প্রয়োজন। সাবার রাণীর উল্লিখিত আলোচনা কোরআন মাজীদে বিবৃত হয়েছে, আল্লাহ বলেনঃ-
قالت ان الملوك اذا دخلوا قرية افسدوها وجعلوا اعزة اهلها اذلة وكذالك يفعلون- واني مرسلة اليهم بهدية فنظرة بم يرجع المرسلون-
অর্থ: সে (সাবার রাণী) বলল, রাজ্যাধিপতিগণ যখন কোন জনপদে প্রবেশ করে তখন, সে জনপদকে উজাড় করে দেয়। আর তথাকার সম্মানী সম্ভ্রান্ত নাগরিকদেরকে অপমানিত অপদস্থ করে, এবং এরাও তেমনিই করবে। আর আমি তাদের নিকট কিছু উপহার পাঠাচ্ছি, অনন্তর দেখব প্রেরিতরা কি নিয়ে আসে। (সূরা, নামল. আয়াত, ৩৪-৩৫, পারা.১৯)
কোরআন কারীমে সাবার রাণীর নাম উল্লিখিত হয় নাই। তাফসীরবিদ মনীষীদের বর্ণনাসূত্রে তাঁর নাম বিলকীস বলে জানা যায়। তাদের সকলেই তাঁর নাম বিলকীস বলে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এটা সর্বসম্মত ও সর্বজনস্বীকৃত।

Posted in কোরআনের গল্প | Comments Off on হযরত সোলায়মান (আঃ) ও সাবার রাণী

প্রসব কালীন স্রাব

প্রশ্নঃ নির্ধারিত সময়ের পূর্বে গর্ভপাত হলে তারপর নির্গত রক্ত নেফাস (প্রসব কালীন) ¯্রাবের হুকুমে হবে কি না?
উত্তরঃ যদি কারো গর্ভপাত হয় এবং পতিত সন্তানের দু’একটি অঙ্গ পূর্ণ হয়ে থাকে, তাহলে এরপর প্রবাহিত রক্তটাও নিফাস। আর যদি তার মধ্যে মানুষের কোন অঙ্গের বিকাশ না ঘটে বরং একটি গোশতের টুকরামাত্র, তাহলে এরপর পতিত রক্ত নিফাস নয়। সম্ভব হলে হায়েয হবে নইলে ইস্তিহাযা। যেমন- যদি তিন দিনের কম সময়ে রক্ত বন্ধ হয়ে যায় অথবা পবিত্রতার পনের দিন না যেতেই এই রক্ত এসে যায়, তাহলে হায়েয হতে পারে না, তাই তা ইস্তিহাযা হবে। [তথ্যসূত্র– আদ্দুরুল মুখতার, বেহেশতীযেওর]
প্রশ্নঃ আজকাল অনেক মহিলার সিজারের মাধ্যমে সন্তান হয়। সন্তান পরবর্তী যে ¯্রাব দেখা যায় তা কি নেফাসের রক্ত হিসেবে গণ্য হবে?
উত্তরঃ সন্তান স্বাভাবিক নিয়মে ভূমিষ্ট হোক বা সিজার করে হোক এরপর মহিলার যে রক্ত¯্রাব আসে তা নেফাস বলেই গণ্য হবে। [তথ্যসূত্র– আলবাহরুর রায়েক, ফাতাওয়া হিন্দিয়া, আদ্দুরুল মুখতার]
প্রশ্নঃ কখনো কখনো সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর ৪০ দিনের বেশি সময় রক্ত আসে। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত দিনগুলোর হুকুম কি হবে। তাতে নামায রোজা করা যাবে কি না?
উত্তরঃ সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর যদি রক্ত চল্লিশ দিনের বেশি প্রবাহিত হয়। তাহলে যদি এটা তার জীবনের প্রথম প্রসব হয় তবে চল্লিশ দিন নিফাস আর অবশিষ্ট দিন ইস্তিহাযা গণ্য হবে। চল্লিশ দিন শেষ হতেই গোসল করে নামায পড়া শুরু করবে, রক্ত বন্ধের অপেক্ষা করবে না। আর যদি এটা তার প্রথম বাচ্চা না হয় তাহলে নিশ্চয় তার পূর্ব প্রসবের একটি অভ্যাস আছে। এখন সেই অভ্যাসের দিনগুলোকে নিফাস ধরে অবশিষ্ট দিনগুলোকে ইস্তিহাযা মনে করবে। [তথ্যসূত্র– আল বাহরুর রায়েক]
প্রশ্নঃ কোন মহিলার যদি প্রথম বাচ্চার সময় নেফাসের যে অভ্যাস ছিল যদি পরবর্তীতে সে অভ্যাসের চেয়ে বেশি দিন রক্ত আসে তাহলে কি করবে। যেমন- কারো ৩০ দিন রক্ত আসার অভ্যাস ছিল কিন্তু একবার ৩০ দিন অতিক্রম হয়ে যায় তাহলে তার হুকুম কি হবে?
উত্তরঃ কোন মহিলার হয়তো ৩০ দিন রক্ত যাওয়ার অভ্যাস ছিল, কিন্তু একবার ৩০ দিন অতিক্রম হওয়ার পরও রক্ত বন্ধ হল না; এমতাবস্থায় এই মেয়েলোক এখন গোসল না করে অপেক্ষা করবে। অতঃপর যদি পূর্ণ ৪০ দিন শেষে বা ৪০ দিনের ভিতর রক্ত বন্ধ হয় তাহলে এই সব কয় দিনই নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে। পক্ষান্তরে যদি ৪০ দিনের বেশী রক্ত জারী থাকে, তাহলে পূর্বের অভ্যাস মোতাবেক ৩০ দিন নেফাসের মধ্যে গণ্য হবে এবং অবশিষ্ট দিনগুলো ইস্তেহাযা বলে গণ্য হবে। ৪০ দিন পর গোসল করে নামায পড়তে থাকবে এবং ৩০ দিনের পরের ১০ দিনের নামাযের কাযা করবে। [তথ্যসূত্র– আল বাহরুর রায়েক, ফাতহুল কাদীর]
প্রশ্নঃ নেফাস অবস্থায় নখ পালিশ বা এ জাতীয় বস্তু লাগানো জায়িয কি না?
উত্তরঃ নিফাস অবস্থায় যেহেতু উযু ও নামাযের প্রয়োজন পড়ে না তাই ঐ সময় নখ পালিশ লাগানো জায়েয হবে। কিন্তু পাক হওয়ার পর উযু বা গোসল করার সময় তা তুলে ফেলতে হবে। কারণ, সাধারণতঃ আমাদের দেশে প্রচলিত নখ পালিশ ব্যবহারে নখের ভিতরে পানি প্রবেশ করে না বিধায় উযু নামায কোনটাই সহীহ হয় না।
উল্লেখ্য, নখ পালিশ ইত্যাদি ব্যবহার যদিও সাময়িক সৌন্দর্য অর্জিত হয়, কিন্তু এগুলো স্থায়ীভাবে ব্যবহার করা ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর। তাই এগুলো ব্যবহার অভ্যস্ত না হওয়া ভাল। [তথ্যসূত্র– ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল]

Posted in প্রসবকালীন স্রাব | Comments Off on প্রসব কালীন স্রাব

মাসিক স্রাব

প্রশ্নঃ মহিলারা হায়েয (মাসিক ¯্রাব) অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ শুনতে পারবে কি না?
উত্তরঃ হ্যাঁ, মহিলারা হায়েয (মাসিক ¯্রাব) অবস্থায় পরিবত্র কুরআন শরীফ শুনতে পারবে। অবশ্য এ অবস্থায় পবিত্র কুরআন শরীফ স্পর্শ ও পড়তে পারবে না। [তথ্যসূত্র– ফাতওয়ায়ে শামী]
প্রশ্নঃ একজন মহিলার অভ্যাস হলো তার প্রতি মাসে প্রায় ৬ দিন করে মাসিক হয়। এক মাসে ৫ দিনের মাথায় আছরের নামাযের পূর্বে বন্ধ হয়ে যায়। তবুও নামায না পড়ে ৬ দিনের অপেক্ষায় থেকে ফজরের সময় মাসিক হয়নি দেখে গোসল করে নামায পড়েছে। কিন্তু যোহরের পূর্বে আবার রক্ত দেখা দেয়। জানতে চাই, ঐ মহিলা নামায পড়ার কারণে গুনাহগার হবে কি না?
উত্তরঃ পূর্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই যদি রক্ত বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তার জন্য সতর্কতামূলক গোসল করে পাক পবিত্র হয়ে নামায পড়ে নেয়া উচিত। কিন্তু এমতাবস্থায় সহবাস করা থেকে বিরত থাকতে হবে, যেহেতু এখনো রক্ত আসার সম্ভাবনা আছে। তবে মহিলাটি তার পূর্বের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে যে নামায পড়েছে, তার জন্য গুনাহগার হবে না। বরং এটাই নিয়ম। উল্লেখ্য, যদি পূর্বের মেয়াদ শেষ হয়ে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সাথে সাথে গোসল করে নামায আদায় করবে। তখন গোসল করার পর অথবা মাসিক বন্ধ অবস্থায় এক ওয়াক্ত নামায অতিবাহিত হওয়ার পর সহবাস করতে পারবে। [তথ্যসূত্র– ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, বেহেশতী যেওর, ফাতওয়ায়ে রাহমানিয়া]
প্রশ্নঃ একজন মহিলার মাসিক ৬ দিন স্থায়ী হয়ে থাকে। কোন কোন বার দেখা গেছে- প্রথম থেকেই সামান্য সামান্য ¯্রাব হয় এবং ১০ দিনের বেশী থাকে। বর্তমানে এটা একটা অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে যে, এ রকম স্বল্প স্রাব শুরু হলেই ঐ মাসে ১০ দিনের বেশী স্থায়ী হয়ে থাকে। এমতাবস্থায় উক্ত মহিলার জন্য ৬ দিনের পর থেকেই মাসিক অবস্থাকালীন শরয়ী নিষেধাজ্ঞাগুলো উঠে যাবে, না কি সম্পূর্ণ ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে?
উত্তরঃ উপরোক্ত অবস্থায় উক্ত মহিলাকে দশ দিন দশ রাত্রি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। যদি ¯্রাব দশ দিন দশ রাত্রির চেয়ে অতিরিক্ত জারি থাকে, তাহলে পূর্বের অভ্যাস অনুযায়ী ছয় দিন হায়েয গণ্য হবে। আর সেই সুরতে ছয় দিন বাদ দিয়ে বাকী দিনগুলোর নামায, রোযা কাযা করতে হবে। আর যদি ¯্রাব দশ দিনেই বন্ধ হয়ে যায়, দশ দিনের বাইরে না যায়, তাহলে পুরো দশ দিনই হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। [তথ্যসূত্র– ইমাদাদুল মুফতীন, ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম, হিদায়া]
প্রশ্নঃ যদি কোন মহিলা কোরআনের শিক্ষিকা হয়, তাহলে হায়েজ (মাসিক) অবস্থায় তার কোরআন শরীফ পড়ানোর পদ্ধতি কি হবে? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তরঃ হায়েজ অবস্থায় যেমনিভাবে কোরআন তিলাওয়াত করা না জায়েয, তদ্রুপ কাউকে শেখানোর উদ্দেশ্যেও পড়া নাজায়েয। তাই হায়েজ অবস্থায় যাতে মহিলা শিক্ষিকাদের কোরআন পড়াতে না হয় এ ব্যবস্থা রাখা জরুরী। এ ধরণের সুব্যবস্থা হওয়ার আগ পর্যন্ত হায়েয অবস্থায় যদি কখনো বাচ্চাদেরকে কোরআন শরীফ পড়ানো জরুরী হয়, তাহলে শব্দে শব্দে থেমে কিংবা বানান করে পড়াবে। এ ছাড়া নিজে মুখে উচ্চারণ না করে বাচ্চাদেরকে দিয়ে পড়িয়ে শুধু ভুল জায়গা ধরিয়ে দিতে পারবে। [তথ্যসূত্র–খুলাসাতুল ফাতাওয়া, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া, ফাতহুল কাদীর ]
প্রশ্নঃ হয়েজ অবস্থায় কুরআনের আয়াত লেখা জায়েয আছে কি না?
উত্তরঃ হয়েজ অবস্থায় কুরআনের আয়াত লেখা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে একান্ত প্রয়োজন দেখা দিলে আয়াতের লিখিত অংশে হাত না লাগিয়ে লেখা যেতে পারে। [তথ্যসূত্র– ফাতহুল কাদীর, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া]

Posted in মাসিক স্রাব | Comments Off on মাসিক স্রাব

ঢিলা-কুলুখ

প্রশ্নঃ পায়খানার পর ঢিলা-কুলুখের সাথে পানি ব্যবহার করা লাগবে কি না?
উত্তরঃ পায়খানার পর ঢিলা/কুলুখ ব্যবহার করে পানি ব্যবহার করা সুন্নাত। তবে যদি শুধু পানি ব্যবহার করা হয় তাহলেও পবিত্রতা অর্জন হয়ে যাবে। আর যদি পায়খানা পায়ূপথের বাহিরে এক দেরহামের (তথা- হাতের তালুর নীচ স্থান সমপরিমান) চেয়ে বেশী পরিমান স্থানে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পানি ব্যবহার করা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে পানি ব্যবহার না করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না। সূত্র– ফাতওয়ায়ে শামী।
প্রশ্নঃ পেশাবের পর ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করার গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তরঃ পেশাব করার পর ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার করা সুন্নাত। কারণ, ঢিলা-কুলুখ ব্যবহার না করলে নাপাকী ভালভাবে পরিষ্কার হয় না। তবে যদি ঢিলা বা টয়লেট পেপার পাওয়া না যায়, তাহলে শুধু পানি দ্বারা অঙ্গ ভালভাবে ধৌত করবে এবং হাত মাটিতে ঘষে অথবা সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিবে। –আহসানুল ফাতওয়া, বাদায়েউস সানায়ে।
প্রশ্নঃ কয়টি ঢিলা ব্যবহার করা সুন্নাত?
উত্তরঃ ঢিলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোন সংখ্যা জরুরী নয়। বরং পরিষ্কার হওয়া শর্ত। এমনকি যদি একটি ঢিলার দ্বারাও পরিচ্ছন্নতা অর্জন হয় তাহলে সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। আর যদি তিনটি ঢিলা দ্বারাও পরিচ্ছন্নতা অর্জন না হয় তাহলে সুন্নাত আদায় হবে না। অবশ্য ঢিলার ক্ষেত্রে মুস্তাহাব হল, তা বেজোড় সংখ্যায় হওয়া এবং কমপক্ষে ৩টি হওয়া। [তথ্যসূত্র– উমদাতুল ফিকহ্]
প্রশ্নঃ যদি এমন স্থানে পেশাব করে যেখানে ঢিলা ইত্যাদি পাওয়া যায়নি তখন পেশাব করার পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ এমন স্থানে পেশাবের পর সাথে সাথে পানি ব্যবহার করবে না। কিছুক্ষণ বসে থাকবে, একটু কাশি দিবে বা অন্ডকোষের নীচ থেকে মূত্রনালীর মাথা পর্যন্ত হালকাভাবে একটু মর্দন করে নিবে, তারপর পানি ব্যবহার করবে। যাতে পেশাব পরিপূর্ণ পরিষ্কার হয়ে যায়। [তথ্যসূত্র– আহসানুল ফতাওয়া, ফাতাওয়ায়ে রাহমানিয়া]
প্রশ্নঃ বাথরুম বা মলত্যাগের স্থানে ঢিলা রাখার সহীহ পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ রাথরুমের ভিতরে বা মলত্যাগের স্থানে ঢিলা রাখার মুস্তাহাব পদ্ধতি হল-পবিত্র পাথরগুলো বা টয়লেট পেপার ডান দিকে রাখবে। ব্যবহৃতগুলো বাম পাশে রাখবে। আর নাপাক লাগা জায়গাটি নীচের দিকে করে রাখবে যাতে নাপাক চোখে না পড়ে। [তথ্যসূত্র– উমদাতুল ফিক্হ]

Posted in ঢিলা-কুলূপ | Comments Off on ঢিলা-কুলুখ

পায়খানা

প্রশ্নঃ প্রথমে কোন পা দিয়ে পায়খানায় প্রবেশ করবে?
উত্তরঃ প্রথমে বাম পা দিয়ে এস্তেনজায় (বাথরুমে) প্রবেশ করবে। [তথ্যসূত্র– বেহেশতী জেওর]
প্রশ্নঃ এস্তেনজা (বাথরুম) থেকে বের হওয়ার সময় কোন পা আগে দিবে?
উত্তরঃ বের হওয়ার সময় প্রথমে ডান পা বের করা সুন্নাত [তথ্যসূত্র– আহকামে যিন্দেগী]
প্রশ্নঃ মল ত্যাগ করার পর কিভাবে ধৌত করবে?
উত্তরঃ প্রথমে পেছনের রাস্তা তারপর সামনের রাস্তা ধৌত করবে। দুই রাস্তার মধ্যখানের স্থানটুকুও মধ্যমা বা কনিষ্ঠা আঙ্গুল দ্বারা মর্দন করে ধৌত করবে। [তথ্যসূত্র– মারাকিউল ফালাহ ও মাফাতিহুল জিনান]
প্রশ্নঃ গুহ্যদ্বার দিয়ে কৃমি বের হলে অযু ভঙ্গ হবে কি না?
উত্তরঃ পিছনের রাস্তা দিয়ে কোন কিছু বের হলেই অযু ভেঙ্গে যায়। তাই কৃমির গায়ে নাপাক না লেগে থাকলেও অযু ভেঙ্গে যাবে। [তথ্যসূত্র– ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, ফাতওয়ায়ে খানিয়া]
প্রশ্নঃ ছোট বাচ্চাকে পশ্চিমমুখী করে পেশাব-পায়খানা করানো যাবে কি না?
উত্তরঃ না, ছোট বাচ্চাকেও পশ্চিমমুখী করে পেশাব-পায়খানা করানো মাকরূহ এবং নিষিদ্ধ। [তথ্যসূত্র– বেহেশতী জেওর]

Posted in পায়খানা | Comments Off on পায়খানা

পেশাব

প্রশ্নঃ দাঁড়িয়ে পেশাব করার হুকুম কী?
উত্তরঃ দাঁড়িয়ে পেশাব করা নিষেধ। তা বিজাতীয় ফ্যাশন। মুসলমানের জন্য তা গুনাহের কাজ। —সূত্র: আদ্দুররুল মুখতার।
প্রশ্নঃ ছোট বাচ্চাকে পশ্চিমমুখী করে পেশাব-পায়খানা করানো যাবে কি না?
উত্তরঃ না ছোট বাচ্চাকেও পশ্চিমমুখী করে পেশাব-পায়খানা করানো যাবে না। তা নিষিদ্ধ। এতে যে করাবে তার গুনাহ হবে। তাই এ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে।
প্রশ্নঃ কখনও কখনও পেশাব করার সময় পেশাবের ছিটা লুঙ্গী অথবা পায়জামায় লেগে যায় তখন নামাযের জন্য করণীয় কি? ঐ কাপড় পাল্টাতে হবে? না কি তা সহ নামায পড়া যাবে?
উত্তরঃ যদি পেশাবের ছিটা কাপড়ে লেগে যায়, আর তা সুচের মাথার ন্যায় ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র হয় তাহলে তা মাফ এবং কোন সমস্যা ছাড়াই নামায সহীহ হয়ে যাবে। আর যদি বেশী হয়ে আয়তনে অনূর্ধ্ব এক দেরহাম (হাতের তালুর মাঝের নিচু অংশ) পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে ধুয়ে নেয়া ওয়াজিব। না ধুয়ে নামায পড়লে মাকরূহে তাহরীমীর সাথে নামায হয়ে যাবে, অবশ্য উক্ত নমায দ্বিতীয়বার পড়তে হবে। আর যদি এক দিরহামের চেয়ে বেশী হয় বা বিভিন্ন জায়গায় ছিটা লাগে আর তার পরমিান এক দিরহামের চেয়ে বেশী হয়ে যায় তাহলে তা না ধুয়ে নামায পড়া যাবে না। বরং উক্ত কাপড়ে নামায পড়তে চাইলে নাপাকী দূর করার জন্য তা ধুয়ে নেয়া ফরজ। তবে কেউ যদি কাপড়ের পেশাব লাগার স্থানটি ভুলে যায়, সুনির্ধারিত ভাবে বুঝতে না পারে যে, কাপড়ের কোন অংশে পেশাব লেগেছে , তাহলে চিন্তা-ফিকির করে একটি জায়গা নির্ধারণ করে ঐ জায়গাটি ধুয়ে নিবে। এভাবেও উক্ত কাপড় পাক হয়ে যাবে। কিšতু পরবর্তিতে যদি তার নিকট স্পষ্ট হয়ে যায় যে, পেশাব অন্য জায়গায় লেগেছে, তাহলে ঐ কাপড় পরিধান করে যে কয় ওয়াক্ত নামায পড়েছে তা আবার পুনরায় পড়ে নিতে হবে। [ তথ্যসূত্র- ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, আদ্দুররুল মুখতার, ফাতওয়ায়ে দারুল উলূম]
প্রশ্নঃ পরীক্ষার জন্য পেশাব ভর্তি বোতল পকেটে নিয়ে নামায আদায় করলে তা সহীহ হবে কি না?
উত্তরঃ না এ অবস্থায় নামায সহীহ হবে না। বরং পুনরায় নামায আদায় করতে হবে। ওয়াক্ত শেষ হয়ে থাকলে কাযা করতে হবে। [তথ্যসূত্র– শরহুল মুন্ইয়া]
প্রশ্নঃ অনেক সময় প্র¯্রাবের পর দীর্ঘ সময় তা ঝরতে থাকে, এতে জামাত ছুটে যাওয়ারও উপক্রম হয়, জানতে চাই এ অবস্থায় নামায পড়ার হুকুম কি?
উত্তরঃ প্রশ্নের বর্ণনা অনুযায়ী এমন ব্যক্তি মাজুর নয়। তাই তাকে পরিপূর্ণ পবিত্রতা অর্জন করেই নামায আদায় করতে হবে। পবিত্রতা অর্জনের জন্য কিছু সময় ব্যয় হলেও পূর্ণ পাক না হয়ে জামাতে শরীক হতে পারবে না। উল্লেখ্য, এ অবস্থায় কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া জরুরী। [তথ্যসূত্র– ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া]

Posted in পেশাব | Comments Off on পেশাব