মেয়েদের সাজ-সজ্জা বিষয়ক জরুরী মাসয়ালা

প্র্রশ্ন : সাজ-সজ্জা বিষয়ে ইসলামের মৌলিক দিক নির্দেশনা কী?
উত্তর : সাজ-সজ্জা সম্পর্কে চারটি মৌলিক বিষয় মহিলাদের স্মরণ রাখতে হবে।
[১] সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের নিয়ত ঠিক করে নিতে হবে। অহংকার ভাব প্রকাশ অথবা পর পুরুষ বা অন্য মহিলাদের দেখানো এবং তাদের সাথে গর্ববোধ করার উদ্দেশ্যে পোশাক-পরিচ্ছেদ পরিধান করা এবং সাজ-গোজ গ্রহণ করা নাজায়েয, এ জন্য গোনাহগার হতে হবে।
তেমনি অতিরিক্ত সাজ-সজ্জা ও রূপচর্চা শরীয়ত পছন্দ করে না। মহিলারা সাজ-গোজ করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু এটাকে নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ হিসেবে রুটিন বানিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিজেকে সাজানোর চিন্তায় মগ্ন থাকা, সর্বক্ষণ মন-মানসিকতাকে এ কাজে ব্যস্ত রাখা এটা আদর্শ মুসলিম মহিলাদের স্বভাব বিরোধী। যারা উত্তম আদর্শে ও সুন্দর চরিত্রে সজ্জিত হতে চায় তাদের আবার কৃত্রিম ও অপ্রয়োজনীয় সাজ-গোজের পিছনে সময় নষ্ট করার অবকাশ কোথায়?
তবে মহিলারা শরীয়তের পরিসীমার মধ্যে যে সাজ-সজ্জা করবে তা যদি স্বামীর খুশী করার উদ্দেশ্যে হয়, অন্য কোনো মহিলা বা নামাহরাম পুরুষদের দেখানো বা অহংকার প্রকাশের উদ্দেশ্যে না হয়, তাহলে এ সাজ-সজ্জার জন্য সে ছওয়াব পাবে। এতে অন্যান্য মানুষ খুশী হোক বা নারাজ হোক কিছু যায় আসে না।
[২] সাজ-সজ্জা বিষয়ে যে সকল কাজ অকাট্য ভাবে শরীয়ত পরিপন্থী। সেগুলো করা কোন ভাবেই মহিলাদের জন্য জায়েয নেই। স্বামী বা অন্য কেউ যদি এ সকল কাজ করার হুকুম দেয় এবং তা পালন না করলে তারা অসন্তুষ্ট হয় তবে এ পরিস্থিতিতেও তা করা যাবে না।
হাদিসে সুস্পষ্ট আছে ঃ অর্থাৎ ঃ আল্লাহ তা’আলার অবাধ্যতামূলক কাজে সৃষ্টির আনুগত্য জায়েয নেই। (সুনানে আবু দাউদ : হা. নং- ২২৫৬)
[৩] সাজ-সজ্জা বিষয়ে যে সকল কার্যকলাপ শরীয়ত অনুমোদিত বিষয়াবলীর আওতায় অর্থাৎ জায়েয আছে, সে ক্ষেত্রে স্বামী করার কথা বললে তার পূর্ণ আনুগত্য করা স্ত্রীর কর্তব্য। এ সম্পর্কে হাদীসের ভাষ্য হল : আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে মহিলাদেরকে আদেশ করতাম তারা যেন আপন স্বামীদেরকে সিজদাহ করে। (তিরমিযী শরীফ : হা. নং- ১০৭৯)
[৪] সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে অমুসলিমদের অনুসরণ ও অনুকরণ করা যাবে না। তাদের বিশেষ বিশেষ নিয়ম-নীতি মান্য করা যাবে না। এমনকি এ ব্যাপারে স্বামীর কথাও মান্য করা যাবে না।

প্র্রশ্ন : মহিলাদের মাথার চুল কাটা বৈধ কি না?
উত্তর : মহিলার মাথার চুল কাটা অথবা ফ্যাশনের জন্য চুলকে ছোট ছোট করা, ডানে-বামে, সামনে-পিছনের যে কোন দিক থেকে হোক না কেন তা পুরুষের সঙ্গে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে নাজায়েয ও গুনাহ।
এ সম্পর্কে হাদীসে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। রাসূলে কারীম সাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম ইরশাদ করেন,
‘‘আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত ঐ সকল পুরুষের উপর যারা মহিলাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে এবং ঐ সকল মহিলাদের উপর যারা পুরুষদের সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” (সহীহ বুখারী : হা. নং- ৫৪৩৫)

অতএব মহিলাদের জন্য মাথার চুল কাটা জায়েয নেই। স্বামী এর জন্য নির্দেশ দিলেও স্ত্রীর জন্য এ আদেশ পালন করা নাজায়েয। কেননা আল্লাহ তা’আলার অবাধ্য হয়ে স্বামীর অনুগত্য করা হারাম। এমতাবস্থায় স্ত্রীর উচিত ন¤্রতা ও ভদ্রতা সঙ্গে অসম্মতি প্রকাশ করা। স্বামীকে শরীয়তের নির্দেশ জানিয়ে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা। এতে আশা করা যায় যে, স্বামী যেহেতু একজন মুসলমান তাই শরীয়তের নির্দেশ অমান্য করবে না। এবং শরীয়ত বিরোধী কাজে বাধ্য করতে স্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করবেনা।

প্রশ্ন : মহিলাদের জন্য বব্ কাটিং চুল রাখা বৈধ কি না?
উত্তর : মহিলাদের জন্য বব্ কাটিং চুল রাখা সম্পূর্ণ নাজায়েয সুতরাং তা থেকে বিরত থাকা অত্যাবশ্যক।

প্রশ্ন : মহিলারা চুল ছাঁটতে পারবে কি না?
উত্তর : মহিলাদের মাথার চুল কাটার যে হুকুম চুল ছাঁটার হুকুমও তাই। অর্থাৎ- এ কাজ সম্পূর্ণ নাজায়েয। তবে যদি চুলের অগ্রভাগ ফেটে শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়, যার দরুণ চুলের মধ্যে জটিলতা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে চুলের অগ্রভাগ ছাঁটার অনুমতি আছে। তাছাড়া সাধারণ ভাবে যদি উচু বা নীচু হয়ে যায়, অর্থাৎ চুলের অগ্রভাগে সামান্য কাটা চুল অসমভাবে লম্বা বা খাটো অবস্থায় থাকে তাহলে অগ্রভাগ থেকে ছেঁটে সমান করার অবকাশ আছে।

প্রশ্ন : মহিলাদের চুলে ডিজাইন করা যাবে কি না?
উত্তর : মহিলাদের চুল না কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করে রাখা জায়েয। তবে এক্ষেত্রে সর্বদা নি¤েœালিখিত বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
১. এর দ্বারা যেন কাফের বা পাপাচারী মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা না হয়।
২. তা হতে হবে শুধুমাত্র স্বামীর মনোরঞ্জন করার উদ্দেশ্যে।
৩. একাজে এত সময় নষ্ট করা যাবে না, যার প্রেক্ষিতে অন্যান্য প্রয়োজনীয় কজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
৪. শরীয়ত বহির্ভূত কোন পন্থা অবলম্বন করে ডিজাইন করা যাবে না।

প্রশ্ন : মহিলারা চুল বৃদ্ধির জন্য তা কাটতে পারবে কি না?
উত্তর : কোনো কোনো মহিলাদের চুলের অগ্রভাগ দু’তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে চিকন চুলে রুপান্তরিত হয়। ফলে চুলের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তখন যদি চুলের অগ্রভাগ কেটে দেয়া হয়, তাহলে আবার নতুন করে চুল বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এ অবস্থায় চুল বাড়ানোর জন্য অগ্রভাগ কেটে দেয়া নিঃসন্দেহে জায়েয। তবে এ ছাড়া অন্য কোন উেেদ্দশ্যে চুলের আগা কাটা যাবে না।

প্রশ্ন : রোগ-ব্যাধির কারণে চুল কাটা যাবে কি না?
উত্তরঃ যদি রোগের কারণে মহিলাদের চুল কাটার প্রয়োজন দেখা দেয় এবং কাটা ছাড়া কোন উপায় না থাকে তাহলে অপরাগতার কারণে তা শরয়ী ওযর হিসেবে ধর্তব্য হবে। এ ওজরের ভিত্তিতে চুল কাটা জায়েয আছে। কিন্তু যখনই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে তখন চুল কাটার এ অনুমতিও থাকবে না। অর্থাৎ এর পর আর চুল কাটা জায়েয হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মুত্তাকী দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া শর্ত। নিছক নিজের মন অনুযায়ী তা করা যাবে না।

প্রশ্ন : ছোট মেয়েদের চুল কাটা যাবে কি না?
উত্তর : যে সকল মেয়েরা ছোট এখনো প্রাপ্ত বয়স্কা হয়নি অর্থাৎ যাদের বয়স নয় বছরের কম, তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বা অন্য কোনো ভাল উদ্দেশ্যে তাদের চুল কাটার অনুমতি আছে। তবে কাফের বা ফাসেকদের বাহ্যত সাদৃশ্য অবলম্বন থেকে বিরত থাকবে, কেননা শরীয়ত তাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছে।

প্রশ্ন : মহিলাদের চুল রঙিন করা বৈধ কি না?
উত্তর : বিউটি পার্লারে মেয়েদের চুল বিভিন্ন রঙে রঙিন করা হয়। এগুলো যদি শরীয়তের পরিসীমার মধ্যে থেকে হয় তাহলে শরয়ী দিক থেকে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নেই। শরয়ী সীমারেখা প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে সর্বাবস্থায়ই এহেন কাজ পরিহার করা শ্রেয়।

প্রশ্ন : মহিলাদের ভ্রু চিকন করা বৈধ কি না?
উত্তর : আজকাল মহিলারা ভ্রু সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার উদ্দেশ্যে ভ্রুর কিছু লোম উপড়ে ফেলে। যার ফলে ভ্রুদ্বয় সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়। এটা শরীয়তের দৃষ্টিতে নাজায়েয। কেননা শরীর আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। শরয়ী ও প্রাকৃতিক বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া এ শরীরের কোন অংশেই পরিবর্তন বা রূপান্তর করা জায়েয নেই। সঙ্গত কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৌন্দয্য বৃদ্ধির জন্য দাঁতের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করা, শরীরে চিত্রাঙ্কন করা বা চিত্রাঙ্কন করানোকে না জায়েয, অভিসম্পাতের উপযুক্ত এবং আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টির মাঝে পরিবর্তন করা আখ্যা দিয়েছেন। তিনি শরীর থেকে লোম উপড়ে ফেলার ব্যাপারে কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন। (সহীহ বুখারী : হা. নং- ৫৪৭৬) সুতরাং ভ্রুর মাঝে দুরত্ব সৃষ্টি করা যা আজকাল সাধারণ ফ্যাশনের পরিনত হয়েছে সম্পূর্ণ নাজায়েয।
স্বামীকে খুশী করার উদ্দেশ্যেও এরূপ করা জায়েজ নেই। তবে যদি ভ্রুর লোম অতিরিক্ত লম্বা হয়ে যায় এবং বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকার কারণে খারাপ দেখা যায়, তাহলে তা কেটে কিছুটা ছোট করা জায়েয।

প্রশ্ন : মহিলাদের চেহারার লোম পরিষ্কার করা বৈধ কি না?
উত্তরঃ মহিলাদের জন্য মুখমন্ডলের লোম পরিষ্কার করা জায়েয। তবে তা উপড়ে ফেলা উচিৎ নয়। কেননা এতে শারীরিক কষ্ট হয়ে থাকে, তাই পাউডার জাতীয় (হেয়ার রিমোভার) বস্তু দ্বারা পরিষ্কার করা শ্রেয়।

প্রশ্ন : মহিলাদের গোঁফ-দাড়ী হলে তা পরিষ্কার করা যাবে কি না?
উত্তর : যদি কোন মহিলার মুখে গোঁফ-দাড়ী গজায়, তাহলে তা পরিষ্কার করা শুধু জায়েযই নয় বরং অতি উত্তম। যেহেতু উপড়াতে কষ্ট হয় তাই তা না করে কোনো প্রকার পাউডার দ্বারা পরিষ্কার করা উচিত। তদ্রুপ যদি কোনো মহিলার ঠোঁটের উপর লোম গজায় তাহলে তা পরিষ্কার করা নিষেধ নয়। বরং তা পরিষ্কার করা মহিলাদের জন্য উত্তম ও মুস্তাহাব।
প্রশ্ন : মহিলারা হাত পায়ের লোম পরিষ্কার করতে পারবে কি না?
উত্তরঃ মহিলাদের জন্য হাত ও পায়ের লোম পরিষ্কার করা জায়েয। কেননা তাদের জন্য লোম না হওয়াই সৌন্দর্য। আর যেহেতু তাদের মূলই হচ্ছে লোম না থাকা, তাই এতে সৃষ্টির মধ্যে কোনো প্রকার পরিবর্তন বলা যাবে না। এবং এ ক্ষেত্রে ধোকা দেয়ারও অর্থ বুঝায়না। সুতরাং হাত পায়ের লোম পরিষ্কার করতে পারবে।

প্রশ্ন : মহিলারা শরীরে চিত্রাঙ্কন করতে পারবে কি না?
উত্তর : মহিলাদের শরীরে যে কোনো ধরণের চিত্রাঙ্কন করা জায়েয নেই। এবং এ কাজ সম্পূর্ণ হারাম। এর পদ্ধতি হলো শরীরে সুঁই জাতীয় কোনো কিছু দ্বারা গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে এর মধ্যে সুরমা বা নীল ভরে দেয়া এবং এভাবে শরীরে জীব-জন্তু বা অন্য কোনো জিনিসের চিত্র আঁকা। এ ব্যাপারে হাদীস শরীফে কঠিন ধমক দেয়া হয়েছে। রাসূল কারীম সা. ইরশাদ করেন, “আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত সে মহিলার উপর পতিত হোক যে শরীরে চিত্রাঙ্কন করে এবং চিত্রাঙ্কন করায়। (সহীহ মুসলিম, হা. নং- ৩৯৬৬)

প্রশ্ন : মহিলারা চুলে চুল মিশাতে পারবে কি না?
উত্তর: বর্তমানে দেশ-বিদেশে বিভিন্নভাবে পরচুলা অর্থাৎ কৃত্রিম চুলের ব্যবহার ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞান এ বিষয়ে যথেষ্ট উৎকর্ষতা সাধন করেছে। নতুন নতুন পদ্ধতিতে চুলের সংযোজন পদ্ধতি সমূহকে আমরা দু’ভাগে বিভক্ত করতে পারি।
১. মানুষের চুলের পরচুলা।
২. কৃত্রিম চুলের পরচুলা।
হাদীসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট প্রামাণিত হয় যে, মানুষের চুলের তৈরী পরচুলা জায়েয নেই, হারাম। এক্ষেত্রে মেশিনের সাহয্যে স্থায়ী ভাবে সংযোজন করে নেয়া (যা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হবার নয়) আর অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার সমান।
মহিলারা সাধারণত নিজেদেরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য চুলের সঙ্গে অন্য কারো চুল মিশিয়ে চুলকে দীর্ঘ, ঘন ও ফুলিয়ে দেখানোর চেষ্টা করে। এটা তো স্পষ্ট ধোঁকা ও শঠতা। তাই হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই এ জাতীয় কাজ থেকে মহিলাদের বিরত থাকা বাঞ্চনীয় ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম এরশাদ করেন- এমন মহিলার উপর আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত পতিত হোক যে (নিজের চুলকে লম্বা বা ফুলিয়ে দেখানের উদ্দেশ্যে) নিজের চুলের সঙ্গে অন্য কারো চুল মিশায় এবং সে মহিলার উপরও অভিসম্পাত যে অন্য কোনো মহিলাকে বলে যে, অন্যের চুল আমার চুলের সঙ্গে মিশিয়ে দাও। (সহীহ বুখারী : ৫৪৭৭/৭৮/৭৯)
তবে যদি পরচুলা কৃত্রিম চুল দ্বারা হয় তাহলে তা ব্যবহারের অবকাশ আছে। প্রয়োজনে তা ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রশ্ন : পরচুলাতে মাসহ্ ও গোসলের হুকুম কি?
উত্তর : পরচুলা যদি শরীরের সাথে এমন স্থায়ী ভাবে সংযোজন করা হয়, যা শরীর থেকে পৃথক করা যায় না, তাহলে অযু করার সময় তার উপর মাসাহ্ করা জায়েয।
এমতাবস্থায় ফরয গোসলও সহীহ হবে। এ চুল যদি অস্থায়ীভাবে লাগানো হয়, তাহলে এর উপর মাসাহ্ জায়েয হবে না এবং শরীরের আসল লোমকুপ পর্যন্ত যদি পানি না পৌঁছে তাহলে ফরয গোসলও জায়েয হবে না। তাই অযু করার সময় তা মাথা থেকে সরিয়ে রেখে মাথা মাসাহ্ করতে হবে এবং ফরজ গোসলে সময় তা খুলে রেখে গোসল করা ওয়াজিব।

প্রশ্ন : উটের কুঁজের ন্যায় চুল বাঁধা যাবে কি না?
উত্তর : মহিলাদের জন্য মাথার চুলকে উটের কুঁজের ন্যায় বাঁধা জায়েয নেই। কেননা হাদীস শরীফে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। বর্ণিত আছে- ‘যে মহিলারা উটের কুঁজের ন্যায় চুল বাঁধবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। এমন কি তারা জান্নাতের গন্ধও পাবেনা’’ অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘যার (জান্নাতের) সু-ঘ্রাণ বহু দূর থেকে অনুভূত হবে।’’ (সহীহ মুসলিম, হা. নং- ৩৯৭১)
এভাবে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়া নিতান্তই দূর্ভাগ্যের কথা। এজন্য মহিলাদেরকে উটের কুঁজের ন্যায় চুল বাঁধা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।
তবে মহিলারা যদি নিজের চুল একত্র করে মাথার উপর অথবা পিছনে খোপা বেঁধে নেয় যেমন মহিলারা সধারণত করে থাকে, এতে কোন নিষেধ নেই। আর তার উপরোল্লিখিত হাদীসে বর্ণিত ধমকের অন্তর্ভূক্তও হবে না। কেননা, উল্লেখিত ভয়াবহতা তো সে সব মহিলাদের জন্য যারা পুরুষদের দৃষ্টি আকর্ষণের নিমিত্তে নিজেদের চুল উটের কুঁজের ন্যায় বেঁধে নেয় এবং লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সর্বত্র বেপর্দা হয়ে খালি মাথায় ঘুরে বেড়ায়।

প্রশ্ন : মহিলারা দাঁত সরু করতে পারবে কি না?
উত্তর : দাঁত সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার জন্য ঘষে বা অন্য কোনভাবে সরু বা চিকন করা এবং দাঁতের মাঝে ফাঁকা সৃষ্টি করা নাজায়েয, অভিসম্পাত যোগ্য। কেননা এসব আল্লাহ সৃষ্ট অবয়ব বা আকৃতিতে পরিবর্তনেরই নামান্তর। যা নিতান্ত গর্হিত আচরণ, কঠোর নিষিদ্ধ ও অভিশপ্ত কাজ। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে ঃ
‘আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত সে সব মহিলাদের উপর যারা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য দঁাঁতের মধ্যে ফাঁকা সৃষ্টি করে। কারণ তা আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেয়।’’
প্রশ্ন : মহিলারা মেক’আপ করতে পারবে কি না?
উত্তর: মহিলাদের উচিৎ তাদের স্বামীদের সামনে নিজেদেরকে উসকু-খুশকো, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা অবস্থায় না রেখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সেজে-গোজে পরিপাটি করে থাকা। এ উদ্দেশ্যে শরয়ী পরিসীমার মধ্যে থেকেই মহিলাদের মেক’আপ করা জায়েয।

প্রশ্ন : প্রসাধনী সামগ্রী ও মেক’আপে ব্যবহৃত অনেক জিনিস যেমন-পাউডার, ক্রীম, লিপস্টিক, লোশন, নেইল পালিশ ইত্যাদি বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী হয়। এগুলোর ব্যাপারে সন্দেহ করা হয় যে, প্রস্তুত কালে এ সাথে শুকরের চর্বি অথবা মৃত জীব-জন্তু ও তাদের চর্বি ইত্যাদি হারাম জিনিস মিশানো হয়ে থাকে। স্বাভাবতই প্রশ্ন জাগে এগুলোর ব্যবহার শরয়ী দৃষ্টি কোন থেকে জায়েয হবে কিনা?
উত্তর : যদি কোন প্রাসাধনীর ব্যাপারে নিশ্চিত ভাবে অবগত হওয়া যায় যে, এ গুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে এমন সব বস্তু যা শরয়ী দিক থেকেও ব্যবহার করা হারাম। যেমন-শুকুরের চর্বি অথবা মৃত জীব-জন্তু ও তাদের চর্বি ইত্যাদি এবং এ বিষয়টিও সন্দেহতীতভাবে জানা যায় যে, এ সকল নাজায়েয ও নাপাক বস্তুকে যে কোন রাসায়নিক পদ্ধতিতে তার মূল স্বত্ত্ব থেকে রূপান্তরিত করা হয়নি। তাহলে এ অবস্থায় এগুলোর ব্যবহার না জায়েয, কেননা এতে ব্যবহৃত বস্তু হারাম ও নাপাক। তাই এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ওযাজিব।
আর যদি এগুলোতে হারাম বস্তুর ব্যবহার সম্পর্কে সুনিশ্চিত ভাবে জানা না যায় শুধুমাত্র সন্দেহ করা হয়, তাহলে নিছক সন্দেহের বশবতী হয়ে এগুলোর ব্যবহারকে না জায়েয বলা যাবে না। কিন্তু যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে এগুলোতে হারাম বস্তু ব্যবহার করা স্বত্ত্বেও রাসায়নিক পদ্ধতিতে তাতে ব্যবহৃত বস্তু সমূহের মূলস্বত্ত্বাকে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাহলে এ অবস্থায় এ সকল সামগ্রীর বাহ্যিক ব্যবহারের অনুমতি আছে। তবে সর্বাবস্থায় এমন সন্দহমূলক বস্তু ব্যবহার থেকে বিরত থাকা বাঞ্চনীয়।
প্রশ্ন : মহিলাদের জন্য লিপস্টীক ব্যবহার করা বৈধ কি না?
উত্তর : আজকাল মহিলারা ঠোঁটে যে সব লিপস্টীক ব্যবহার করে থাকে। এগুলোর ব্যবহারের ব্যাপারে শরয়ী বিধানে কিছুটা বিশ্লেষণ আছে। তাহলো যে সকল লিপস্টীক ব্যবহারে ঠোঁটের উপর আবরণ সৃষ্টি হয় না, ফলে অযু ও ফরজ গোসলের সময় স্বাভাবিক ভাবেই চামড়া পর্যন্ত পানি পৌছে যায়। তাহলে এ ধরণের লিপস্টীক ব্যবহার করা জায়েয আছে।
কিন্তু যদি এর ব্যবহারের কারণে ঠোঁটের উপর গাঢ় আবরণ সৃষ্টি হয়ে যায় ফলে অযু ও ফরয গোসলের সময় শরীরে চামড়া পর্যন্ত পানি না পৌঁছে এমতাবস্থায় পবিত্রতা, অযু ও ফরয গোসলের পূর্বে এগুলো তুলে ফেলা প্রয়োজন। অন্যথায় অযু ও ফরয গোসল হবে না, অর্জিত হবে না পবিত্রতা। আর পবিত্রতা ছাড়া নামাযও হবে না।