কুরবানী

কুরবানীর প্রধান শর্ত

প্রশ্নঃ কুরবানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি?
উত্তরঃ কুরবানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল নিজের নিয়্যাতকে ঠিক করে নেয়া। একমাত্র আল¬াহ তায়ালারসন্তুষ্টির জন্য কুরবানী করা। লোক দেখানো, গোস্ত খাওয়া, মানুষের সমালোচনা থেকে বাঁচা ইত্যাদি কু নিয়্যাত থেকে বেঁচে থাকা একান্ত জরুরী। বিশেষত অনেক বন্ধুর কথা বার্তায় এমনটি ফুঁটে উঠে যা অবশ্যই বর্জনীয়।
প্রশ্নঃ লোক দেখানো নিয়তে কুরবানী করলে তা আদায় হবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানী একটি ইবাদত তা একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই আদায় করতে হবে। লোক দেখানো নিয়তে করলে দুনিয়ার দৃষ্টিতে কুরবানী আদায় হলেও তা মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। এবং এর বিন্দু পরিমাণ সাওয়াবও পাওয়া যাবে না। তাই এ নিয়ত অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
প্রশ্নঃ হারাম পন্থায় অর্জিত টাকা দ্বারা কুরবানী করলে তা আদায় হবে কি না?
উত্তরঃ হারাম পন্থায় অর্জিত টাকা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয হবে না। কুরবানী একটি এবাদত। আর হারাম সম্পদ দ্বারা আদায়কৃত এবাদত গ্রহণযোগ্য নয়। তাই সম্পূর্ণ হালাল টাকা দ্বারা কুরবানী করতে হবে। হাদীস শরীফে আছে “নিশ্চয়ই আল্ল¬াহ পবিত্র। অপবিত্র বস্তু (হারাম বা সন্দেহযুক্ত জিনিস) তিনি কবুল করেন না।” (দেখুনঃ সহীহ মুসলিম শরীফ)

কুরবানী কার উপর ওয়াজিব

প্রশ্নঃ কতটুকু সম্পদ থাকলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব?
উত্তরঃ ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত যে, প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নর-নারীর কাছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সাড়ে ৫২ তোলা রুপার সমমূল্যের সম্পদ থাকবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। বর্তমান বাজার হিসেবে প্রতি তোলা ১৪০০/- টাকা হলে, মোট মূল্য দাঁড়ায় ৭৩৫০০/- টাকা। তবে রুপার বাজার দর হিসেবে তা পরিবর্তন হতে পারে। কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা ও তার অলংকার, ব্যবসায়িক পণ্য, প্রয়োজনে অতিরিক্ত জমি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব পত্র, এমনকি ব্যবহার্য আসবাবপত্রও প্রয়োজন অতিরিক্ত হলে তা নেসাব হিসাবে ধর্তব্য হবে। (দেখুনঃ বাদায়েউস সানায়ে, আদ্দুররুল মুখতার, তাবয়ীনুল হাকায়েক)
প্রশ্নঃ নিজ মালিকানাধীন জমির উপর কুরবানী ওয়াজিব কি না?
উত্তরঃ অনেকের কাছে নিজ মালিকানাধীন জমি থাকে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে যদি জমির মালিক কৃষিজীবী হয় এবং তার জীবিকা নির্বাহের জন্য যতটুকু জমি প্রয়োজন তার চেয়ে অতিরিক্ত জমি থাকে। আর অতিরিক্ত জমির মূল্য যদি স্বর্ণ অথবা রুপার নেসাব সমপরিমাণ হয় তাহলে তার উপর শুধু জমির কারণেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।
আর যদি জমির মালিক চাকুরীজীবী, শ্রমজীবী, আইনজীবী অথবা পেশাজীবী হয়, যার জীবিকা নির্বাহের জন্য জমির কোন প্রয়োজন নেই। জমি তার জন্য অতিরিক্ত সম্পদ হিসেবে গণ্য। এমতাবস্থায় তার জমির মূল্য যদি স্বর্ণ অথবা রুপার নেসাব সমপরিমাণ হয় , তাহলে তার উপর শুধু জমির কারণেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে শামী)
প্রশ্নঃ কুরবানীর নেসাবের হিসাব কবে থেকে কবে পর্যন্ত ধরা হবে?
উত্তরঃ কুরবানীর নেসাবের হিসাব মূলত ১০ই যিলহজ্ব থেকে ১২ই যিলহজ্ব পর্যন্ত। তাই ইতিপূর্বে কেউ নেসাবের মালিক না থেকেও যদি ১০, ১১, ১২ই যিলহজ্বে নেসাবের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং সে আদায় না করলে গুনাহগার হবে। উদাহরণ স্বরুপ যিলহজ্ব মাসের ১১ বা ১২ তারিখে (কুরবানীর পরের দিন বা তার পরের দিন) কোন মেয়ের বিবাহ হল। আর তার মহর বাবদ এক লক্ষ টাকা নগদ দেয়া হল বা কেউ ওয়ারিশ সূত্রে এ দিনগুলোতে নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক হল তাহলে তার উপরও কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে শামী)
প্রশ্নঃ নাবালিগ ছেলে কিংবা মেয়ের উপর কুরবানী ওয়াজিব কি না?
উত্তরঃ নাবালিগ ছেলে কিংবা মেয়ের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। তাই নাবলিগ এর কাছে নেসাব পরিমান সম্পদ থাকলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। সুতরাং অভিবাবকের জন্য তার পক্ষ থেকে কুরবানী করা জরুরী নয়। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে শামী)
প্রশ্নঃ একান্নভূক্ত সংসারে একেক বছর একেক জনের নামে কুরবানী করা যাবে কি না?
উত্তরঃ অনেকে একান্নভূক্ত সংসারে এক বছর বাবার নামে, এক বছর বড় ছেলের নামে, আর এক বছর স্ত্রীর নামে কুরবানী করে। এভাবে প্রতি বছর নাম পরিবর্তন করে থাকে এটা জায়েয নয়। বরং যার উপর কুরবানী ওয়াজিব প্রতি বছর তার নামে কুরবানী করা কর্তব্য । নিজের উপর ওয়াজিব হওয়া শত্বেও অন্যের নামে কুরবানী করলে তার নিজের কুরবানী আদায় হবে না। আর সকলেই যদি নেসাব পরিমান মালের মালিক হয়, তাহলে সকলের উপর ভিন্ন ভিন্নভাবে কুরবানী ওয়াজিব । সবাই স্বতন্ত্রভাবে তার নামে কুরবানী করতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে শামী)

শরীকে কুরবানী

প্রশ্নঃ কোন পশুতে কত ভাগে কুরবানী করা যায়?
উত্তরঃ উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যে কোন সংখ্যা যেমন- দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। আর বকরী, দুম্বা, মেষ ইত্যাদি শুধু একভাগে কুরবানী করা যাবে। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ শরীকে কুরবানীর ক্ষেত্রে মূল লক্ষনীয় বিষয় কি?
উত্তরঃ শরীকে কুরবানীর ক্ষেত্রে সকল সদস্যের টাকা হালাল হতে হবে ও প্রত্যেকের নিয়্যাত ছহীহ হতে হবে। কারো টাকা হারাম হলে বা আল¬াহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন নিয়্যাত থাকলে কোন শরীকের কুরবানী আদায় হবে না। (দেখুনঃ সহীহ মুসলিম, হিদায়া)
প্রশ্নঃ কুরবানীর সাথে আকীকার শরীক হওয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর পশুতে আকীকার শরীক হওয়া বৈধ। ছেলের আকীকার ক্ষেত্রে দুই নাম আর মেয়ের আকীকার ক্ষেত্রে এক নাম দেয়া মুস্তাহাব। তবে ছেলের ক্ষেত্রেও একনাম দিলে আকীকা আদায় হয়ে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে রাহীমীয়া)
প্রশ্নঃ একটি গরুতে ছয় শরীক মিলে এক সপ্তমাংশের মধ্যে অংশীদার হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে নফল কুরবানী দিতে পারবে কি না?
উত্তরঃ একটি গরুতে ছয় শরীকের প্রত্যেকেই সাতের এক অংশ পূর্ণ গ্রহণ করার পর এক সপ্তমাংশের মধ্যে সবাই অংশীদার হয়ে রাসুল এর নামে নফল হিসেবে কুরবানী দিতে চাইলে তা সম্পূর্ণরূপে জায়েয হবে। তবে কেউ যদি এক অংশ পূর্ণ না নিয়ে প্রাথমিক পর্যায়েই সাতের এক অংশের আংশিক গ্রহণ করে তবে উহা জায়েয হবে না। আর এমন অংশীদারের কারণে অন্যান্য অবশিষ্ট অংশীদারদের কুরবানীও নষ্ট হয়ে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে রাহীমীয়া)
প্রশ্নঃ একাধিক শরীকের ক্ষেত্রে যদি কোন শরীক নিজ হাতে জবাই করে তাহলে তার জন্য জবাইয়ের পারিশ্রমিক নেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ একাধিক শরীকের ক্ষেত্রে যদি কোন শরীক নিজ হাতে জবাই করে তাহলে তার জন্য জবাই করে পারিশ্রমিক নেয়া কিছুতেই বৈধ হবে না। কারণ, যেহুতু উক্ত পশুতে জবাইকারীর এক অংশ রয়েছে তাই জবাই করাটা তার নিজের কাজ হিসেবে গণ্য হবে। আর নিজের কাজ করে অন্যের কাছ থেকে পারিশ্রমিক নেয়া জায়েয হবে না। (দেখুনঃ কুরবানীর পাথেয়)

কুরবানী কখন করবে

প্রশ্নঃ মোট কয়দিন কুরবানী করা যায়? এবং তন্মোধ্যে কখন করা বেশি উত্তম?
উত্তরঃ মোট তিন দিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ফজরের পর থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত। তবে এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ রাতে কুরবানী করা যায় কি না?
উত্তরঃ সাধারণত রাতের আধাঁরের কারণে কুরবানীর কাজে বেঘাত সৃষ্টি হতে পারে বিধায় রাতে কুরবানী করা মাকরূহ। অবশ্য যদি বর্তমানে বৈদ্যতিক আলোর মাধ্যমে পরিপূর্ণ আলোর ব্যবস্থা করা হয় তাহলে মাকরুহ হবে না। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ কারো কুরবানীর জন্তু হারিয়ে গেলে সে আরেকটি জন্তু ক্রয় করল। পরে হারানোটি পাওয়া গেল এখন সে কি করবে?
উত্তরঃ কারো কুরবানীর জন্তু হারিয়ে গেছে। সে আরেকটি জন্তু ক্রয় করল। অতঃপর কুরবানীর দিনগুলোতেই হারানো জন্তুটি পাওয়া যায়। তা ধনী লোকের হলে তার জন্য এদু’টির একটি জন্তু কুরবানী করা ওয়াজিব। তাই জন্তুদুটির যে কোন একটি তার মালিক কুরবানী করতে পারবে। কিন্তু এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে মালিক যদি প্রথম জন্তুটি কুরবনী করে তাহলে কোন কথা নেই। আর যদি দ্বিতীয়টি কুরবানী করে তাহলে দেখতে হবে কোনটির মূল্য বেশি। যদি প্রথমটির মূল্য বেশী হয় তাহলে অতিরিক্ত টাকাগুলো ফকির মিসকিনদের মাঝে সাদকা করে দেওয়া মুস্তাহাব। আর উল্লিখিত অবস্থায় যদি কুরবানী দাতা গরীব হয়, তাহলে তার দুটো জন্তুই কুরবানী করা ওয়াজিব।
প্রশ্নঃ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানী করতে না পারে তাহলে সে কি করবে?
উত্তরঃ কারো উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিলো; কিন্তু সে কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে কুরবানী করতে পারেনি। তার উপর একটি ছাগল বা ভেড়া বা একটা বড় জন্তুর সাত ভাগের এক ভাগের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া)
প্রশ্নঃ যদি প্রথমদিন নামাজ পড়তে না পারে তাহলে কুরবানী কখন করবে?
উত্তরঃ যদি প্রথমদিন কোন কারনে নামায পড়া না হয়; তাহলে এলাকাবাসীরা ঈদের নমাযের সময় অতিবহিত হবার পর অর্থাৎ সূর্য ঢলে যাবার পর কুরবানী করতে পারবে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

পশুর বিবরণ

প্রশ্নঃ কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয এবং তাতে নর-মাদার কোন পার্থক্য আছে কি না?
উত্তরঃ উট, গরু-মহিষ, ছগল-ভেড়া, দুম্বা ইত্যাদি পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব পশু থেকে নর-মাদা/পুরুষলিঙ্গ-স্ত্রীলিঙ্গ প্রত্যেকটি দ্বারাই কুরবানী করা জায়েজ। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ এ পশুগুলো গৃহপালিত হওয়া শর্ত কি না? বন্য প্রাণী দ্বারা কুরবানী করা যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর পশুগুলো গৃহ পালিত হওয়া শর্ত। এ ব্যতিত অন্য জন্তু যেমন- হরীন, নীলগাই, বন্য গাভী, মহিশ, ছাগল ইত্যাদিপশু দ্বারা কুরবানী জায়েয নয়। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুর ক্ষেত্রে বয়সের কোন তারতম্য হবে কি না?
উত্তরঃ উট কমপক্ষে ৫ বছর হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া, ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কম ও ৬ মাস বা ততোর্ধ হয়, কিন্তু এমন হৃষ্ট পুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। (দেখুনঃ খুলাাসতুল ফাতাওয়া)
প্রশ্নঃ পশুর এমন কিছু দোষ উল্লেখ করুণ যা থাকলে তা দ্বারা কুরবানী করা যায় না?
উত্তরঃ অন্ধ, কানা, এমন লেংড়া যা কুরবানীর স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না, ক্ষীণ দেহ বিশিষ্ট, কান বা লেজ কাটা, এমন পাগল যা ঘাস বা পানি দিলে খায় না এবং মাঠে চরে না এমন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না। –ফাতহুল কাদীর। (দেখুনঃ ফাতহুল কাদীর)
প্রশ্নঃ কুরবানী করার পর জানা গেল যে ঐ পশু কুরবানীর যোগ্য ছিল না তাহলে এখন কি করবে?
উত্তরঃ কুরবানী করার পর যদি প্রকাশ পায় যে আমার এ পশু কুরবানী আদায় যোগ্য ছিল না। যেমন- বয়স নির্ধারিত সীমার চেয়ে অনেক কম ছিল বা কুরবানী নিষিদ্ধ হওয়ার মত দোষ ছিল তাহলে তার পূর্বের কুরবানী আদায় হয়নি । তাকে এখন একটি বকরী মূল্য ছদকা করতে হবে। (দেখুনঃ কুরবানীর পাথেয়)

কুরবানীর পশু হতে উপকৃত হওয়া

প্রশ্নঃ কুরবানীর পশু জবাই করার পূর্বে তা দ্বারা কোনরূপ উপকার নেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর পশু জবাই করার পূর্বে তা দ্বারা কোন কাজ করানো যেমন- তার উপর চড়া, হাল চাষ করা, পানি উঠানো ইত্যাদি সবকিছুই মাকরুহ। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ কুরবানীর পশু জবাইয়ের পর রশি ইত্যাদি কি করবে?
উত্তরঃ কুরবানীর পশুর রশি ইত্যাদি সব কিছু দান করে দিবে। তবে যদি কোন এক শরীক তা নিতে চায় তাহলে তাদের জন্য নেয়া বৈধ হবে।
প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুর কোন অংশ চামড়া, গোশত ইত্যাদি যদি বিক্রি করা হয় তবে তা জয়েয হবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর পশুর কোন অংশ অর্থাৎ চামড়া, গোশত, চর্বি যদি বিক্রি করা হয় তবে তার সম্পূর্ণ মূল্য সদকা করতে হবে। এই টাকা নিজের কাজে ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুর পশম কেটে তা কাজে লাগনো যাবে কি না?
উত্তরঃ কেউ কুরবানীর পশুর পশম কেটে ফেললে তা সদকা করতে হবে। আর বিক্রয় করে থাকলে তার মূল্য সদকা করে দিতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ কুরবানীর গোশত শুকিয়ে তা জমা করে রাখা যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর গোশত শুকিয়ে তা জমা করে রাখা জায়েয। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)

জবাই করা

প্রশ্নঃ কুরবানীর পশুকে কিভাবে শুয়াবে এবং শুয়িয়ে কি দোয়া পড়া উত্তম?
উত্তরঃ কুরবানীর পশুকে প্রথমে ক্বিবলামুখী করে দক্ষিণে মাথা দিয়ে শোয়াবে। তারপর নি¤েœাক্ত দোয়াটি পড়বে।
إِنّيْ وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلّهِ فَطَرَ السَّموَاتِ وَالاَرْضِ حَنِيْفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ. إِنَّ صَلاَتِيْ ونُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَ مَمَاتِيْ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ. لاَشَرِيْكَ لَه وبِذلِكَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ.
(দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ জবাই-এর জন্য ছুরি চালনা ও জবাই সম্পন্ন হওয়ার পর কি পড়া উত্তম?
উত্তরঃ জবেহ এর জন্য ছুরি চালনার প্রারম্ভে এই দোয়া পড়বে।
بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ.
আর জবাই সম্পন্ন হওয়ার পর এই দোয়া পড়বে।
اَللّهُمَّ تَقَبَّلْ كَمَا تَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ مُحَمَّدٍ وَخَلِيْلِكَ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ.
(দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ জবাই কালে কোন দোয়া পড়া আবশ্যক যা না পড়লে পশু হারাম হবে?
উত্তরঃ তবে অবশ্যই জবাই কালে بِسْمِ اللهِ اَللهُ اَكْبَرُ (বিসমিল্লাহহি আল্লাহু আকবার) বলতে হবে। তা না বললে জবাই সহীহ হবে না এবং পশু হারাম হয়ে যাবে। তবে বাকী অন্যান্য দোয়া পড়া সুন্নাত। তা বর্জন করলে পশু হারাম হবে না। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ নাবালিগ বাচ্চা বা মহিলা জবাই করলে তাদের জবাই সহীহ হবে কি না?
উত্তরঃ নাবালেগ বাচ্চা বা মহিলা যদি সঠিকভাবে জবাই করতে জানে তাহলে তাদের জবাই করতে কোন ক্ষতি নেই। জবাই সহীহ হয়ে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্নঃ জবাই করার সময় পশুর মাথা যদি পৃথক হয়ে যায় তাহলে জবাই সহীহ হবে কি না?
উত্তরঃ জবাই করার সময় পশুর মাথা যেন একেবারে পৃথক করা না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবে। এরুপ করা মাকরুহে তাহরীমী। তবে এতে পশু খাওয়া হারাম হবে না। (দেখুনঃ হেদায়া)

গোশত

প্রশ্নঃ শরীকে কুরবানী করলে গোশত কিভাবে বন্টন করবে?
উত্তরঃ শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বন্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্নঃ কুরবানীর গোশত বন্টনের সহীহ ও উত্তম পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ কুরবানীর গোশতের পুরো মালিক কুরবানীদাতা। সে ইচ্ছে করলে তা খেতে পারে, দান করতে পারে। তবে কুরবানীর গোশতকে তিন ভাগ করে এক তৃতীয়াংশ নিজে রাখা ও এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম।(দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্নঃ কসাই, কাজের বুয়া, কাজের ছেলে ইত্যাদিদেরকে কুরবানীর গোশত দেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ জবাইকারী, কসাই বা কুরবানীর কাজে সহযোগিতাকারী, বাসার বুয়া, কাজের ছেলে, দারোয়ানসহ যে কোন শ্রমিককে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ সামাজিকভাবে এক সপ্তমাংশ বা বেশি-কম নেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কোন কোন এলাকায় দেখা যায় সামাজিকভাবে কুরবানীদাতাদের প্রতি নির্দেশ থাকে যে, তারা গোশত আট ভাগ করে সাত ভাগ নিজেরা নিবে এবং এক ভাগ নির্ধারিত স্থানে পাঠিয়ে দিবে। তা সামাজিকভাবে গরীবদের মাঝে ভাগ করা হয়। কুরবানীর গোশত বন্টনের এ পদ্ধতিটি পরিহারযোগ্য। কারণ এতে শরীকদের উপর এমন একটি পন্থা সামাজিকভাবে চেপে আসে যা শরীয়তে জরুরী কিছু নয়। কুরবানীর গোশতের কতটুকু দান করবে তা কুরবানীদাতার একান্ত নিজস্ব বিষয়। অবশ্য শরীয়তে পুরো গোশতের এক তৃতীয়াংশ সদকা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। (দেখুনঃ হিদায়া)
প্রশ্নঃ কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকে দেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর গোশত অমুসলিমদেরকেও দেয়া জায়েয আছে। কিন্তু তাদেরকে তা না দেওয়া উত্তম। (দেখুনঃ হিদায়া)

চামড়া

প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়া কুরবানী দাতা নিজে ব্যবহার করতে পারবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে দেয়; তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরী। (দেখুনঃ ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)
প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়া পাক করে খাওয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কুরবানীর চামড়া চাইলে নিজে পাক কারেও খেতে পারবে। যেমন- অনেক এলাকায় মাথার চামড়া খাওয়া হয়। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়ার টাকা কাদেরকে দেওয়া যাবে?
উত্তরঃ যাদেরকে যাকাত দেয়া যায় তাদেরকেই কুরবানীর পশুর চামড়ার টাকা দিতে হবে। তা কোন ধনি ব্যক্তিকে দেয়া যাবে না। নি¤েœ চামড়ার মূল্যগ্রহনোপযুক্ত কিছু ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রতত্ত হল। সকলের ক্ষেত্রেই নেসাব পরিমান সম্পদের মালিক না হওয়ার শর্ত প্রযোজ্য হবে।
@ যে কোন গরীব, মিসকিন, এতিমকে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে।
@ আপন ভাই, বৈমাত্রেয় ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই, দুধ ভাই এ-ছাড়া এদের সন্তানদেরকেও দেয়া জায়েয।
@ আপন চাচা, ফুফু এবং এদের সন্তানদেরকে দেয়া যাবে।
@ আপন মামা, খালা এবং এদের সন্তাদের কে দেয়া যাবে।
@ সৎ মা, সৎ বাবা এবং এদের সন্তানদের দেয়া যাবে।
@ শ্বশুর, শাশুরী, শালা, শালী এবং এদের সন্তানদের দেয়া জায়েয।
@ যে কোন ধনী ব্যক্তির স্ত্রী, মা, বাবা, এবং প্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে দেয়া জায়েয।
@ কোন ধনী মহিলার স্বামীকে দেয়া জাযেয।
@ নিজ জামাতা ও পুত্র বধুকে দেয়া জায়েয।
@ ছাত্র স্বীয় শিক্ষককে অথবা শিক্ষক স্বীয় ছাত্রকে দিতে পারবে।
@ স্বামী স্বীয় স্ত্রীর এমন সস্তানদেরকে দেয়া জয়েয যারা তার অন্য স্বামীর ঘরে হয়েছে।
@ স্ত্রী স্বীয় স্বামীর এমন সন্তানদেরকে দেয়া জায়েয যারা তার অন্য স্ত্রীর ঘরে হয়েছে।
@ মুসাফির ব্যক্তির সফর অবস্থায় সম্পদ পুরিয়ে গেলে তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয, যদিও তার বাড়ীতে নেসাব পরিমাণ সম্পদ আছে।
@ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুখাপেক্ষী এমন মিশুকে দেয়া জাযেয়, যার পিতা নেসাব পরিমান মস্পদের মালিক নয়। যদিও তার মাতা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক।
@ এমন ব্যক্তিকে দেয়া জায়েয, যে সুস্থ সবল ও উপার্জনে সক্ষম। কিন্তু নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়ার মূল্য কাদেরকে দেয়া যাবে না?
উত্তরঃ যাদেরকে যাকাত দেয়া জায়েয নেই, তাদেরকে কুরবানীর চামড়ার টাকা দেয়াও জায়েয নেই। নি¤েœ তাদের কতকের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হল।
@ আপন বাবা, দাদা, দাদী, পর দাদা, পর দাদীসহ তদের উর্ধতন পিতা-মাতা (যদি থাকে) প্রমুখকে দেয়া যাবে না।
@ আপন মা, নানা, নানী, পর নানা, পর নানীসহ তাদের উর্ধতন পিতা-মাতা (যদি থাকে) প্রমুখকে দেয়া যাবে না।
@ স্বীয় ঔরসজাত সন্তান, নাতি, নাতনী, পর নাতী, পর নাতনীসহ তাদের নি¤œস্তরের ছেলে মেয়েদেরকে দেয়া যাবে না।
@ স্বামী নিজ স্ত্রীকে দিতে পারবে না।
@ স্ত্রী নিজ স্বামীকে দিতে পারবে না।
@ যে তালাকপ্রাপ্তা মহিলা ইদ্দতের মধ্যে আছে, তার স্বামী তাকে কুরবানীর চামড়ার টাকা দিতে পাবে না।
@ ধনী তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন ব্যক্তির অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়েদেরকে দেয়া যাবে না।
@ বিধবা ধনী মহিলা তথা নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক এমন মহিলাকে এবং তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানকে দেয়া জায়েয নেই।
@ মাদরাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামকে বেতন হিসেবে দেয়া জাযেয নেই।
@ বনী হাশেম তথা নবী আ. এর বংশের কাউকে কুরবানীর চামড়ার টাকা দেয়া জায়েয নেই। তবে তারা দরিদ্র হলে, যাকাত, ফেৎরা, ও কুরবানীর চামড়ার টাকা ব্যতীত অন্য টাকা তাদেরকে সাহায্য করা জরুরী।
@ ধনী তথা নেসাব পরিমান সম্পদের মালিককে দেয়া জায়েয নেই।
@ সমজিদ, মাদরাসা, খানকাহ্, মুসাফিরখানা, এতীমখানা, স্কুল, কলেজ, সড়ক ইত্যাদির নির্মাণ কাজে, কিংবা কুপ বা খাল খননের কাজে যাকাত, ফেৎরা ও কুরবানীর চামড়ার টাকা ব্যয় করা জায়েয নেই।
@ মৃত ব্যক্তির কাফনের কাজে যাকাত, ফেৎরা ও কুরবানীর চামার টাকা ব্যয় করা জাযেয নেই।
@ কবরস্থান বা ঈদগাহের জমি ক্রয় অথবা মাটি ভরাট কাজে যাকাত, ফেৎরা ও কুরবানীর চামড়ার টাকা ব্যয় করা জায়েয নেই।
@ অমুসলিমদেরকে তথা হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী এবং কাদিয়ানীদেরকে যাকাত, ফিৎরা ও কুরবানীর চামড়ার টাকা দেয়া জায়েয নেই। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্নঃ কুরবানীর চামড়ার মূল্য মাদরাসায় দেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ যে সব দ্বীনী মাদরাসায় যাকাত ও কুরবানীর টাকা দ্বারা গরীব ছত্রদের ফ্রি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয় সে সব মাদরাসার গোরাবা তহবীলে কুরবনীর চামড়া বা তার মূল্য দান করা অতি উত্তম ও অধিক সাওয়াবের কাজ। কেননা, এতে একদিকে নিজের কুরবানীর চামড়ার মূল্য সঠিক স্থানে দেয়া হয়, অপরদিকে দ্বীনী কাজে সহযোগীতা করা হয়। প্রকাশ থাকে যে, মাদরাসা কতৃপক্ষ জনগণ থেকে সংগৃহীত জাকাত, ছাদকা ও কুরবানীর চামড়া বিক্রিত অর্থ গরীব ছাত্রদেরকে প্রদান করে থাকে। তাই এ নিয়ে শংসয়ে থাকা অনর্থক। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

মান্নতের কুরবানী

প্রশ্নঃ মান্নতের কুরবানীর অর্থ কি?
উত্তরঃ মান্নতের কুরবানীর অর্থ হল, কেউ যদি মান্নত করে যে আমার ঐ কাজটি পূর্ণ হলে আমি একটি প্রাণী কুরবানী করবো। তাহলে এমন মান্নত করলে তার উপর একটি কুরবানী করা ওয়াজিব। (দেখুনঃ বাদায়েয়ূস সানায়ে)
প্রশ্নঃ মান্নতের কুরবানী আদায়ের জন্য নেসাবের মালিক হওয়া শর্ত কি না?
উত্তরঃ না, মান্নতকারীর মান্নত পুরা হলেই তাকে কুরবানী করা ওয়াজিব। এই ওয়জিব পুরা করার জন্য তার নেসাবের মালিক হওয়া শর্ত নয়। নেসাবের মালিক না হলেও মান্নতের কুরবানী আদায় করতে হবে। (দেখুনঃ কুরবানীর পাথেয়)
প্রশ্নঃ যদি মান্নতকারী “আমি কুরবানী করবো” একথার দ্বারা “ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই করার” নিয়ত করে থাকে তাহলে ঐ মান্নত কিভাবে পুরা করবে?
উত্তরঃ যতি মান্নতকারী “কুরবানী করবো” একথা বলে “ঈদুল আযহার দিনে পশু জবাই”এর নিয়ত করে থাকে অথবা কোন নিয়ত করেছে তা স্মরণ না থাকে, তাহলে উভয় অবস্থাতেই আগামী কুরবানী পর্যন্ত অপেক্ষা করে কুরবানীর দিনগুলোতে কুরবানীর শর্তের সাথে অর্থাৎ- কুরবানীর পশুর বয়স, দোষমুক্তি ও অন্যান্য শর্ত অনুযায়ী ঐ মান্নত পুরা করা জরুরী। আর তা দ্বারা ওয়াজিব কুরবানী আদায় হবে না। ওয়াজিব কুরবানী আদায় করার জন্য ভিন্ন ভাবে কুরবানী দিতে হবে। (দেখুনঃ ফাতহুল কাদীর)
প্রশ্নঃ যদি মান্নতকারী “আমি কুরবানী করবো” একথার দ্বারা শুধু জবাই করার” নিয়ত করে থাকে তাহলে ঐ মান্নত কিভাবে পুরা করবে?
উত্তরঃ যতি মান্নতকারী “কুরবানী করবো” একথা বলে শুধু জবাই করা উদ্দেশ্য নেয়, তাহলে ঐ মান্নত পুরা করার জন্য কুরবানীর শর্ত হওয়া লাগবেনা এবং কুরবানীর দিনগুলোতে হওয়া লাগবে না। তা যে কোন সময় একটি পশু জবাই করে দিলেই সহীহ হয়ে যাবে।
প্রশ্নঃ কেউ যদি নির্ধারিত পশু কুরবানী করার মান্নত করে? তাহলে মান্নত পুরা হলে কি করবে? আর ঐ পশু দ্বারা কোন উপকার নেয়া যাবে কি না?
উত্তরঃ কেউ যদি নির্ধারিত পশু কুরবানী করার মান্নত করে যেমন- কেউ বলল, “যদি আমার ঐ কাজটি হয়ে যায় তাহলে আমি আমার এই গরুটি কুরবানী করবো” তাহলে ঐ গরু মান্নতের গরু হয়ে গেছে। আর কাজটি পূর্ণ হয়ে গেলে উহা মান্নতের কুরবানী হিসেবে জবাই করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এবং তা মান্নতের গরু হওয়ার কারণে উহা দ্বারা কোন কাজ নেয়া বৈধ হবে না। এরপর সর্ব প্রথম কুরবানীর যে মৌসুম আসবে সেই মৌসুমেই তা কুরবানী করা ওয়াজিব হবে। বিলম্ব করা বৈধ হবে না। (দেখুনঃ কুরবানীর পাথেয়)
প্রশ্নঃ মান্নত পুরনার্থে কৃত কুরবানীর গোশত, চামড়া ইত্যাদির হুকুম কি?
উত্তরঃ মান্নত পুরনার্থে কৃত কুরবানীর গোশত, চামড়া, সবকিছুই গরীব, মিসকিনদের অধিকার। তা হতে নিজেও খেতে পারবে না বা কোন ধনীকেও খাওয়াতে পারবে না। এবং তা দ্বারা নিজের উপর ওয়াজিব কুরবানীও আদায় হবে না। তবে হ্যাঁ, মান্নতপুরাকারী যদি নিজেই গরীব হয় , যাকাত গ্রহনের উপযুক্ত হয় তাহেলে সে নিজেও খেতে পারবে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)