রোযা


প্রশ্ন: রোযা কাকে বলে?
উত্তর: সুব্হে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলা হয়। (দেখুনঃ কুদুরী)
প্রশ: রোযা কার উপর ফরজ?
উত্তর: পাগল ও নাবালক ব্যতীত সকল মসলমানের উপরই রমযানের রোযা ফরয। শরীয়ত সমর্থিত কোন ওযর বা কারণ ছাড়া রোযা বর্জন করা হারাম। মান্নত করারা দ্বারাও রোযা ফরয হয়ে যায়। তা ছাড়া কাযা-কাফ্ফারার রোযাও ফরয। এর বাইরে যত রোযা আছে সবই নফল। রাখলে বিপুল সওয়াব আছে। না রাখলে কোন পাপ নেই। (দেখুনঃ মাজমাউল আনহুর: খন্ড: ১, পৃ: ২৩১, বেহেশতী জেওর: ১৭৩)
প্রশ্ন: বছরের কয় দিন রোজা রাখা হারাম?
উত্তর: বছরের মোট পাঁচ দিন রোজা রাখা হারাম। দুই ঈদের দুই দিন এবং কুরবানীর ঈদের পর তিন দিন রোযা রাখা হারাম। (দেখুন: নূরুল ঈযাহ: ৫২)
প্রশ্ন: রোযার উপকারিতা কি কি?
উত্তর: রোযার অনেক উপারিতা রয়েছে নি¤েœ তা উল্লেখ করা হল:
১] রোযা দ্বারা স্বভাবতঃ প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর দ্বারা মানুষের পাশবিক শক্তি অবদমিত হয়, চারিত্রিক পরিশুদ্ধি অর্জিত হয়। কেননা, ক্ষুধা ও পিপাসার কারণে মানুষের জৈবিক ও পাশবিক প্রবৃত্তি নিস্তেজ হয়। মনুষ্যত্ব জাগ্রত হয় এবং মহান রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতায় অন্তর বিগলিত হয়।
২] মানুষের অন্তরে আল্লহ তাআলার ভয়ভীতি এবং তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি হয়। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, (রোযা ফরয করা হয়েছে এজন্য যে) “যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”
৩] রোযা দ্বারা মানুষের স্বভাবে ন¤্রতা ও বিনয় সৃষ্টি হয় এবং মানব মনে আল্লাহর মহত্মের ধারণা জাগ্রত হয়।
৪] অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচিত হয়।
৫] দূরদর্শিতা প্রখর হয়।
৬] মানুষের মধ্যে ফেরেশতা চরিত্র সৃষ্টি করে।
৭] মানুষের মধ্যে এক প্রকার রূহানী শক্তি সৃষ্টি হয়।
৮] আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ হয়।
৯] রোযার বরকতে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও মমত্ববোধ এবং পরস্পরের প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি কোন দিনও ক্ষুধার্ত এবং পিতাসার্ত থাকেনি সে কাখনো ক্ষুধা পিপাসার কষ্ট বুঝতে পারে না।
১০] রোযা পালন আল্লাহর প্রতি গভীর প্রেমের বহিঃপ্রকাশ। কেননা কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মালে তাঁকে লাভ করার জন্য প্রয়োজনে প্রেমিক পানাহার বর্জন করে এবং দুনিয়ার সবকিছু ভুলে যায়। ঠিক তেমনিভাবে রোযাদার ব্যক্তিও আল্লাহর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে সবকিছু ছেড়ে দেয়। এমনকি পানাহার পর্যন্ত ভুলে যায় । তাই রোযা হলো আল্লাহ প্রেমের অন্যতম নিদর্শন।
১১] রোযা মানুষের জন্য রূহানী খাদ্যতুল্য যা পরকালে কাজে আসবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রোযা রাখবে না সে পরকালে ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকবে।
১২] রোযা মানুষের জন্য ঢাল স্বরূপ। তা মানুষকে শয়তানের আক্রমণ থেকে হিফাজত করে ।
১৩] রোযা দ্বারা আত্মার পরিশুদ্ধি, হৃদয়ের সজীবতা হাসিল হয়। সর্বোাপরি এর দ্বারা অন্তরাত্মার হাসিল হয় প্রচুর প্রশান্তি এবং দূরিভূত হয় হৃদয়ের অস্তিরতা । পক্ষান্তরে পানাহরের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি ও অযথা গল্প-গুজব মানুষকে আল্লাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে গোমরাহীতে লিপ্ত করে দেয়।
১৪] রোযা দ্বারা শারীরিক সুস্থতা হাসিল হয়। কেননা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিটি মানুষের জন্য বছরের কায়েকদিন উপবাস থাকা আবশ্যক তাদের মতে স্বল্প খাদ্য গ্রহণ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সুফী সাধকদের মতে হৃদয়ের স্বচ্ছতা হাসিলে স্বল্প খাদ্য গ্রহণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
প্রশ্ন:ছেলে-মেয়ে কত বছর বয়স হলে রোযা রাখা ফরজ হয়। আর কত বছর হলে তাদেরকে রোযা রাখার জন্য শাস্তি দিবে?
উত্তর: ছেলে-মেয়ে বালিগ (প্রাপ্ত বয়স্ক) হলে তাদের উপর রোজা রাখা ফরজ হয়ে যায়। তাবে বালিগ না হলে দশ বৎসরের হয়ে গেলে তাদের দ্বারা শাস্তি দিয়ে হলেও রোযা রাখানো কর্তব্য। এর পূর্বেও শক্তি হলে রোযা রাখার অভ্যাস করানো উচিত। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

প্রশ্ন:রোযার জন্য নিয়তের গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তর: যে কোন আমলের জন্য নিয়ত করা ফরজ। তেমনি রমযানের রোযার জন্যও নিয়ত করা ফরয। নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহার ও যৌনতৃপ্তি থেকে বিরত থাকলেও রোযা হবে না। নিয়ত বলা হয় অন্তরের ইচ্ছা বা সংকল্পকে। (দেখুনঃ খুলাসাতুল ফাতওয়া, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:নিয়ত মুখে করা জরুরী কি না?
উত্তর: নিয়ত বলা হয় অন্তরের ইচ্ছা বা সংকল্পকে। তাই মুখে নিয়ত করা জরুরী নয়। অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হবে, তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম। অবশ্য এক্ষেত্রে তা আরবীতে হওয়া জরুরী নয়। যে কোন ভাষায় করা যায়। বাংলা ভাষায় করলে এভাবে বলবেঃ আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। (দেখুনঃ শরহে বেকায়া)
প্রশ্ন:পুরো রমযানের জন্য একত্রে রোযার নিয়ত করা যথেষ্ট কি না?
উত্তর: পুরো রমযানের জন্য একত্রে নিয়ত করা যথেষ্ট নয়, বরং প্রত্যেক দিনের জন্য পৃথক পৃথক নিয়ত করতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে রহীমিয়্যাহ)
প্রশ্ন:রোজার নিয়তে সাহরী খেলে সেটিই নিয়তের জন্য যথেষ্ট হবে কি না?
উত্তর: হ্যাঁ, রোযার উদ্দেশ্যে সাহরী খেলে সেটিই নিয়তের জন্য যথেষ্ট হবে। উল্লেখ্য, রাতে রোযার নিয়ত করার পর সুবহে সাদেকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও যৌানকর্ম করা জায়েয আছে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:রোজার নিয়ত কখন করা উত্তম। দিনের কতক্ষণ পর্যন্ত রোযার নিয়ত করা যায়?
উত্তর: রোযার নিয়ত রাতে করা উত্তম। তবে যদি কেউ রাতে নিয়ত না করে , তাহলে সূর্য ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত রমযানের রোযার নিয়ত করতে পারবে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার, আহকামে যিন্দেগী)
প্রশ্ন:রমযান মাসে যদি অন্য কোন রোযা বা কাযা রোযার নিয়ত করে তাহলে কোনটা আদায় হবে।
উত্তর: রমযান মাসে অন্য যে কোন প্রকার রোযা বা কাযা রোযার নিয়ত করলেও এই রমযানের রোযা আদায় হবে- অন্য যে রোযার নিয়ত করবে সেটা আদায় হবে না। (দেখুনঃ ফাতওয়াযে আলমগীরী)
প্রশ্ন:মনে রোযা রাখার কোন ইচ্ছা বা সংকল্প ছাড়াই যদি শুধু এমনিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খানা-পিনা, স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকে তাহলে তা রোযা হবে কি না?
উত্তর: যদি কেউ এমনিতেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খানা-পিনা, স্ত্রী সহবাস না করে। মনে তার রোযা রাখার কোন সংকল্পও নেই। সময় হয়নি অথবা অন্য কোন কারণে তার খানা-পিনা হয়নি। এভাবেই দিন কেটে গেছে। তাহলে রোযা হবে না। অন্তরে রোযা রাখার ইচ্ছা ও সংকল্প থকলেই তার রোযা হয়ে যেত। (দেখুনঃ নুরুল ঈযাহ)
প্রশ্ন:রমযানের রোযার ক্ষেত্রে ‘রমযানের রোযা বা ফরয রোযা’ এভাবে নিয়ত করা শর্ত কি না?
উত্তর: রমযানের রোযার ক্ষেত্রে যদি রাতে মনে মনে ভাবে ‘আগামী কাল আমি রোযা রাখব’ অথবা ‘আজ আমার রোযা’, তাহলেই রোযা হয়ে যাবে। রমযানের ক্ষেত্রে ‘রমযানের রোযা’ রাখছি অথবা ‘ফরয রোযা রাখছি’ এমন কিছু নির্দিষ্ট না করলেও রোযা হয়ে যাবে। (দেখুনঃ মুনতাকাল আনহুর, বেহেশতী জেওর)

প্রশ্ন:চাঁদদেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী রোযা ও ঈদ করা যাবে কি না?
উত্তর: ২৯ শে শাবান বা ২৯ শে রামযান যদি আকাশ পরিস্কার না থাকে তাহলে নি¤œলিখিত শর্তানুযায়ী চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী রোযা রাখা, ঈদ করা যাবে। এক. ঘোষণার দিনটি এমন হতে পারবে না যাতে মাসের হিসাব ২৮ দিনের বা ৩১ দিনের হয়ে যায়। দুই. চাঁদ দেখা কমিটির সদস্যদের প্রত্যেকেই আলেম (শরীয়ত সম্বন্ধে অভিজ্ঞ) এবং বিশ্বস্ত হতে হবে। (দেখুনঃ কুদুরী)
প্রশ্ন:যৌতিস্ক বিদ্যান ব্যক্তি তারকার হিসাবে চাঁদের খবর দিলে তা গহণযোগ্য হবে কি না?
উত্তর: না, চাঁদ একমাত্র দেখার সাথে সম্পর্ক। তা কোন বিদ্যানের হিসাবের সাথে সম্পর্কীত নয়। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:যদি কোন কারণে সূর্য ঢলার পূর্বে বা পরে চাঁদ দেখা যায় তাহলে তার উপর নির্ভর করে রোযা বা ঈদ করা যাবে কি না?
উত্তর: না, সূর্য ঢলার পূর্বের বা পরের দেখা চাঁদের উপর নির্ভর করে রোযা বা ঈদ করা যাবে না। এই চাঁদ পূর্বের দিনের চাঁদ। তা পরবর্তি দিনের নয়। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:সারা দেশের কেউ চাঁদ দেখেনি। শুধু একজন চাঁদ দেখে স্বাক্ষ দিয়েছে। কিন্তু তার স্বাক্ষও গ্রহণ করা হয়নি। এখন তার কি করণীয়?
উত্তর: এমন ব্যক্তি নিজে রোযা রাখবে। সে যদি রোযা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে পরবর্তীতে তাকে ঐ রোযা কাযা করতে হবে। কাফ্ফারা দিতে হবে না। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:বিদেশে কেউ রোযা পূর্ণ করে বাংলাদেশে এসে দেখল আঠাশটা হয়েছে বা বাংলাদেশ থেকে আঠাশটা করে বিদেশে গিয়ে দেখল ঈদ হচ্ছে তাহলে সে কি করবে?
উত্তর: এমন ব্যক্তি বিদেশে গিয়ে সবার সাথে ঈদ করবে। পরবর্তীতে একটি রোযা কাযা করে নিবে। আর বিদেশী ব্যক্তি দেশে এসে আরো একটা রোযা রাখবে ও সকলের সাথে ঈদ করবে। (দেখুনঃ আল-কাউসার)
প্রশ্ন:আকাশ পরিস্কার, মেঘাচ্ছন্ন কিংবা ধুলোয় ধূসরিত হলে চাঁদ দেখার ব্যাপারে কত জনের কথা গ্রহণযোগ্য হবে?
উত্তর: যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন কিংবা ধুলোয় ধূসরিত থাকে এবং সে কারণে চাঁদ নযরে না পড়ে, তাহলে একজন দ্বীনদার পরহেযগার সত্যবাদী নারী বা পুরুষ যদি চাঁদ দেখেছে মর্মে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে রমযানের চাঁদ প্রমাণিত হয়ে যাবে। কিন্তু যদি মেঘের কারণে ঈদের চাঁদ না দেখা যায়, তাহলে শুধু এক ব্যক্তির সাক্ষ্যই যথেষ্ট নয়। চাই দর্শক যতবড় নির্ভর যোগ্য ব্যক্তিই হোক না কেন। হ্যাঁ, যদি দুই জন দ্বীনদার নির্ভরযোগ্য পুরুষ অথবা একজন দ্বীনদার নির্ভরযোগ্য পুরুষ এবং দুই জন মহিলা নিজেরা চাঁদ দেখেছে মর্মে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে তা গৃহীত হবে। আর যদি চার জন মহীলাও চাঁদ দেখার সাক্ষ্য দেয়, তাহলেও তা গৃহীত হবে না।
আর আকাশ যদি পরিস্কার থাকে, তাহলে দুই-চারজনের চাঁদ দেখায় ঈদ-রমযান কোনটাই প্রমাণিত হবে না। হঁ্যাঁ, যদি এত বেশি পরিমাণে লোক সাক্ষ্য দেয় যাদের ব্যাপারে মন সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, এত লোক কোন ভাবেই মিথ্যাবাদী হতে পারে না। এবং এক সাথে এতগুলো লোক একটি কথা বানিয়ে বলতে পারে না তবেই চাঁদ উঠেছে বলে প্রমাণিত হবে। (দেখুনঃ মুখতাসারুল কুদূরী)

প্রশ্ন:ভুলে পানাহার বা সহবাস কররে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: রোযার কথা ভুলে গিয়ে কিছু খেয়ে ফেললে বা পান করলে বা স্ত্রী সহবাস করলে রোযা ভাঙ্গবে না ।
( দেখুন ঃ মুসলিম শরীফ ১/ ৩৬৪, হাদীস নং ১৯৫৫)
তবে স্মরণ হওয়া মাত্রই বন্ধ করতে হবে। এমনকি মুখের অবশিষ্ট খাবারও ফেলে দিতে হবে। স্মরণ হওয়ার পর সামান্য কিছু খেলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।
প্রশ্ন:চোখে সুরমা বা ঔষধ ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে কি না, দাড়িতে বা শরীরে তেল লাগানোর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: চোখে সুরমা বা ঔষধ ব্যবহার করার দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না। তদ্রুপ চুলে, দাড়িতে বা শরীরে তেল লাগানোর দ্বারাও রোযা ভাঙ্গবে না। এমন কি চোখের ড্রপ দেওয়ার পর যদি তার স্বাদ গলাতে অনুভব হয় তদ্রুপ সুরমা লাগানোর পর যদি থুথুর বা শ্লেস্মার সাথে সুরমার রং দেখা যায় তাহলেও রোযা ভাঙ্গবে না ।
(দেখুন ঃ শামী ৩/ ৩৬৬- ৬৭, আলমগীরী ১/১৯৯)
প্রশ্ন:দিনে স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: রোযা রেখে দিনে ঘুমালে ও স্বপ্নদোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না ।
(দেখুনঃ শামী ৩/৩৬৭, আল বাহরূর রায়েক ২/২৭২, আলমগীরী ১/২০০)
প্রশ্ন:কাঁচা বা শুকনো মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় কি না?
উত্তর: কাঁচা বা শুকনো মিসওয়াক দিয়ে দাঁত মাজার দ্বারা রোযার কোন ক্ষতি হয় না ।
(দেখুনঃ শামী ৩/৯৯, আলমগীরী ১/১৯৯)
প্রশ্ন:রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা যাবে কি না?
উত্তর: রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা জায়েয আছে। কিন্তু সহবাসের আশংকা থাকলে জায়েয় নেই।
(দেখুন ঃ শামী ৩/৩৭৩, আলমগীরী ১/২০০)
প্রশ্ন:রাতে স্ত্রী সহবাস করার পর বা স্বপ্নদোষ হওয়ার পর সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল না করলে রোযা হবে কি না?
উত্তর: রাতে স্ত্রী সহবাস করলে বা স্বপ্নদোষ হলে সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করে নেওয়া চাই। কোন কারণে সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করতে না পারলেও রোযা নষ্ট হবে না। তবে রোযা অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ অপবিত্র থকা ঠিক নয়। (দেখুনঃ শামী ৩/৩৭২, আলমগীরী ১/২০০)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় বমি হলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে (তা কম হোক বা বেশী, মুখ ভরে হোক বা না হোক) রোযা ভাঙ্গে না । তদ্রুপ বমি মুখে এসে নিজ নিজেই ভিতরে চলে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না । তবে ইচ্ছা করে মুখ ভরে বমি করলে বা অনিচ্ছাবশত বমি হওয়ার পর তা গিলে নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(দেখুনঃ শামী ৩/ ৩৬৬)
প্রশ্ন:গলার মধ্যে ধোয়া, ধুলাবালি বা মাছি প্রবেশ করলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: অনিচ্ছাবশত ঃ গলার মধ্যে ধোয়া ধুলাবালি বা মাছি প্রবেশ করলে রোযা ভাঙ্গবে না, রোযাবস্থায় আগরবাতিসহ যে কোন ধোয়া টেনে নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
( দেখুন ঃ শামী ৩/৩৬৬, আলমগীরী১/ ২০৩, আল বাহরের রায়েক ২/৪৭৪)
প্রশ্ন:পান খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করা সত্তেও মুখের মধ্যে লালচে ভাব থেকে গেলে , রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: না, পান খাওয়ার পর ভালভাবে কুলি করা সত্ত্বেও মুখের মধ্যে লালচে ভাব থেকে গেলে , রোযার ক্ষতি হবে না ।
(দেখুনঃ আলমগীরী ১/ ২০৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৩১)
প্রশ্ন:মশা-মাছি, কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটে ঢুকে গেলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: মশাÑ মাছি কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি অনিচ্ছাকৃত পেটের ভেতরে ঢুকে গেলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(দেখুন ঃ আলমগীরী, ১/২০৩)
প্রশ্ন:শুধু যৌান চিন্তার কারণে শুক্রক্ষরণ হলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: শুধু যৌন চিন্তার কারনে শুক্রক্ষরণ হলে রোযা ভাঙ্গবে না , তবে এ ধরনের কু চিন্তা তো এমনিতেই গুনাহ। আর রোযা অবস্থায় তো আরো জগন্য অপরাধ।
( দেখুন ঃ আলমগীরী, ১/ ২০৩)
প্রশ্ন:কামভাবে মহিলার দিকে তাকানোর ফলে যদি বীর্যপাত হয় তাতে রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: কাম উত্তেজেনার সাথে সাথে মহিলার দিকে তাকানোর ফলে যদি কোন ক্রিয়া কর্ম Ñ ছাড়াই বীর্যপাত হয় তা হলে রোযা ভাঙ্গবে না । আর ক্রিয়া কর্ম করে বীর্যপাত ঘটালে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(দেখুন ঃ আলমগীরী ১/২০৪)
প্রশ্ন:সুস্থাবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর অজ্ঞান বা পাগল হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে কি না?
উত্তর: সুস্থাবস্থায় রোযার নিয়ত করার পর যদি অজ্ঞান বা পাগল হয়ে যায়, তাহলে রোযা নষ্ট হবে না।
(দেখুনঃ আলমগীরী ১/১০৫)
প্রশ্ন:ইনজেকশন, সেলাইন বা ইনসুলিন নিলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর:
১৪. ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না । এমন কি গ্লোকোজ ইনজেকশন নিলেও রোযা ভাঙ্গবে না। তবে বিনা প্রয়োজনে গ্লকোজ ইনজেকশন নেওয়া মাকরুহ তাহরীমী। তদ্রুপ সেলাইন বা ইনসুলিন নিলেও রোযা ভাঙ্গবে না।
(দেখুন ঃ জাওয়াহিরুল ফিকহ, মাসিক আল কাউসার, অক্টোবর ও নভেম্বর -২০০৫ইং)
প্রশ্ন:চোখের দু-এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: চোখের দু-এক ফোটা পানি মুখে চলে গেলে রোযার ক্ষতি হয় না । অবশ্য ঘাম অথবা চোখের পানি যদি এত বেশী পরিমাণে মুখে প্রবেশ করে যে গলার ভিতরে স্বাদ অনুভূত হয়, তা হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
(দেখুনঃ আলমগীরী১/২০৩)
রোযাবস্থায় মাকরুহ বিষয়াদী
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় কোন কিছু চাবানো যাবে কি না?
উত্তর: বিনা ওযরে কোন কিছু চিবানো বা জিহ্বাতে লাগানো যদিও তার স্বাদ গলাতে অনুভব না হয়, তবুও মাকরূহ। তবে বাচ্চাদের জন্য অনন্যপায় হলে খানা চিবিয়ে দেয়া বা স্বামী বদমেজাজী হলে জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে তরকারীর লবণ চেখে দেখা জায়েয আছে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় টুথ পাউঢার, মাজন, কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা যাবে কি না?
উত্তর: রোযাবস্থায় টুথ পাউঢার, মাজন কয়লা ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরূহ। কিন্তু এগুলো গলায় পৌঁছলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (দেখুনঃ ইমদাদুল ফাতওয়া)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় ইঞ্জেকশন নেয়া যাবে কি না?
উত্তর: রোযাবস্থায় ইঞ্জেকশন নেয়া জায়েয। তবে (কোন ওজর ছাড়া) রোযাবস্থায় গ্লুকোজ জাতীয় ইঞ্জেকশন (যা খাদ্যের কাজ দেয় এমন ইঞ্জেকশন) নেয়া মাকরূহ। (দেখুনঃ জাওয়াহিরুল ফিকহ)
প্রশ্ন:গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন অতিবাহিত করা যাবে কি না?
উত্তর: গোসল ফরয- এ অবস্থায় সারা দিন অতিবাহিত করা মাকরূহ। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী বিবস্ত্র হয়ে আলিঙ্গন করা যাবে কি না?
উত্তর: উলঙ্গ অবস্থায় স্বামী-স্ত্রী পরস্পরে আলিঙ্গণ করা বা জড়িয়ে ধরা রোযা অবস্থায় সবসময় মাকরূহ। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় অপবিত্র থাকলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: রোযাবস্থায় দিনের বেশিরভাগ সময় অপবিত্র থাকা মাকরূহ। (দেখুনঃ জাওয়াহিরুল ফিকহ)
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় গীবত, চোগলখুরী , অনর্থক কথাবার্তা ইত্যাদি করা কী?
উত্তর: রোযাবস্থায় গীবত করা, চোগলখুরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা, মিথ্যা বলা, ঝগড়া ফ্যাসাদ করা, গালি-গালাজ করা মাকরূহ।
প্রশ্ন:রোযাবস্থায় আরো কিছু মাকরূহ বিষয় জানতে চাই?
উত্তর: রোযাবস্থায় আরো কিছু মাকরূহ হল,
 ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা।
 মুখে অধিক পরিমাণ থুথু একত্রে করে গিলে ফেলো।
 দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে তা বের না করে মুখের ভিতর থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা।
 নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না-এরূপ মনে হওয়া স্বত্ত্বেও স্ত্রীকে চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণের আস্থা থাকলে ক্ষতি নেই।
 রোযা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোট মুখে নেয়া সর্বাবস্থায় মাকরূহ।
 নিজের মুখ দিয়ে চিবিয়ে কোন বস্তু শিশুর মুথে দেয়া। তবে অনন্যোপায় অবস্থায় এরূপ করলে অসুবিধা নেই।
ঠোটে লিপিষ্টিক লাগালে যদি মুখের ভিতরে চলে যাওয়ার আশংকা হয় তাহলে তা মাকরূহ।

প্রশ্ন: কি কি কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় ও শুধু কাযা কারতে হয়? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: যে কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় ও শুধু কাযা করতে হয় তা নি¤েœ প্রদান করা হল-
 রোযাবস্থায় নাকে ঔষধ দিলে আর তার মজা গলায় অনুভব করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 কুলি বা নাকে পানি দেওয়ার সময় রোযা স্মরণ থাকা অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভাবে গলা বা নাক দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 স্ত্রী বা কোন নারীকে শুধু স্পর্শ, চুম্বনপ্রভৃতি করার কারণেই বীর্যপাত হয়ে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা সেবন করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
 আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পৌঁছালে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 খাদ্যদ্রব্য নয় এমন বস্তু যেমন- লোহা, মাটি, পাথর খেয়ে নিলে বা গলঃধকরণ করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 দাঁতের ফাঁকে আটকে থাকা খাবার যদি ছোলা বুটের সমপরিমান বা অধিক হয় এবং তা গিলে ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি তা ছোলা বুটের চেয়ে কম হয়, তাহলে রোযা ভাঙ্গবে না। তবে মাকরূহ হবে।
 হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর বীর্যপাত না হলেও রোযা অবস্থায় এ কাজ বড় গুনাহ। তাই অবশ্যই তা থেকে বিরত থাকতে হবে।
 ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে রোযা ভেঙ্গ যাবে। আর বমি মুখ ভরে না করলে রোযা ভাঙ্গবে না। আর ইচ্ছাকৃতভাবে যদি গিলে ফেলা হয়, তাহলে বমি কম বা বেশি হোক সর্বাবস্থায় রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 সেহরীর পর পান চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে গেলে ও এ অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 ভুলে পানাহার করার পর রোযা ভেঙ্গ গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন কিছু পানাহার করলে রোযা ভেঙ্গ যাবে।
 রাত আছে মনে করে সুবহে সাদেকের পরে সেহ্রী খেলে রোযা ভেঙ্গ যাবে।
 ইফতারীর সময় হয়নি, দিন রয়ে গেছে অথচ সময় হয়ে গেছে- এই মনে করে ইফতারী করলে রোযা ভেঙ্গ যাবে।
 দুপুরের পরে রোযার নিয়ত করলে রোযা ভেঙ্গ যাবে।
 দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুথুর চেয়ে পরিমাণে সমান বা বেশী হয় এবং কণ্ঠনালীর নীচে চলে যায় তাহরে রোযা ভেঙ্গ যাবে।
 কেউ জোর পূর্বক রোযাদারের মুখে কোন কিছু দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে।
 পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর যোনিতে কোন ঔষধ প্রবেশ করালে।
 মহিলার যৌনিতে ভেজা আঙ্গুল প্রবেশ করালে বা শুকনো আঙ্গুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার প্রবেশ করালে রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি শুকনো আঙ্গুল একবার প্রবেশ করিয়ে একবারেই পুরোটা বের করে নেয়; আবার প্রবেশ না করায়, তাহলে রোযার অসুবিধা হয় না।
 মুখ থেকে একবার বের করে আনা খাদ্য পুনরায় গিলে ফেললে তা যত ছোট বা ক্ষুদ্র হোক না কেন রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ওয়াজিব হবে।
 নাকে ঔষধ বা পানি দিলে যদি তা খদ্যনালীতে চলে যায়, তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং রোযা কাযা করতে হবে ।
 পায়খানার পর পানি ব্যবহারের সময় অতিরিক্ত শৌচ করতে গিয়ে যদি মলদ্বার দিয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করে, তা হলে রোয ভেঙ্গে যাবে । তবে এ ব্যপারে চাপাচাপি না করা চাই।
 রোযাতে মহিলাদের মাসিক শুরু হয়েছে বা বাচ্চা প্রসবের পর নিফাস চলছে। তাহলে মাসিক ও নিফাসকালে রোযা রাখা যাবে না। পবিত্র হওয়ার পর তা কাযা কারে নিতে হবে।
 অন্যের হুমকিতে বাদ্য হয়ে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 ঘাম অথবা চোখের পানি যদি এত বেশী পরিমাণে মুখে প্রবেশ করে যে গলার ভিতরে স্বাদ অনুভূত হয়, তা হলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 বমি হওয়ার কারণে রোযা নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে রোযা ভেঙ্গে ফেললে কাযা করতে হবে।
 গুহ্য দেশের ভিতরে ঔষধ বা পানি ইত্যাদি গেলে রোযা ভেঙ্গে যাবে।
 অন্যের থুথু গিলে নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
 সারা রমাযান মাস বিনা নিয়তে রোযা রাখলে রোযা হবে না , কাযা করতে হবে।
(দেখুন- রাদ্দুল মুহতার, আলবাহরুর রায়িক, ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী, বেহেশতীজেওর ও আহকামে জিন্দেগী)

প্রশ্ন: কি কি কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তর: যে কারণে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয় তা নি¤েœ প্রদান করা হল-
 রোযার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোযা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হয়।
 রোযার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে। স্ত্রীর উপরও কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। স্ত্রীর যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও কাফ্ফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক।
 রোযার নিয়ত করার পর (পাপ হওয়া সত্ত্বেও) যদি পুরুষ তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভিতরে প্রবেশ করে (চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক) তাহলেও পুরুষ স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
 রোযা অবস্থায় কোন বৈধ কাজ করল যেমন স্ত্রীকে চুম্বন দিল কিংবা মাথায় তেল দিল তা সত্ত্বেও সে মনে করল যে, রোযা নষ্ট হয়ে গিয়েছে; আর তার পরে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ইত্যাদি করল, তাহলেও কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে।
(দেখুন- রাদ্দুল মুহতার, আলবাহরুর রায়িক, কুদুরী)

প্রশ্ন:মুসাফিরের জন্য রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: যদি কেউ শরীআত সম্মত সফরে থাকে তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে । তবে অস্বাভাবিক কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। আর অস্বাভাবিক কষ্ট হলে রোযা রাখা মাকরূহ। এমতাবস্থায় রোযা না রেখে পরে তা কাযা করে নিবে। (দেখুনঃ বাদায়েউসর সানায়ে)
প্রশ্ন:সফর অবস্থায় রোযা রাখার পর তা কষ্টের কারণে ভাংতে পারবে কি না?
উত্তর: সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোযা রাখা শুরু করলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না। কেউ ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে তাকে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাযাই যথেষ্ট। (দেখুনঃ রদ্দুর মাহতার)
প্রশ্ন:নিজ বাড়িতে রোজা রেখে সফরে বের হলে তা ভাংতে পারবে কি না?
উত্তর: না, রোজা রেখে সফরে বের হলে ঐ রোজা ভাংতে পারবে না। (দেখুনঃ রদ্দুর মাহতার)
প্রশ্ন:অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: রোযার কারণে যে রোগ বুদ্ধি পায় বা সুস্থ হতে অনেক বিলম্ব হওয়ার প্রবল আশংকা থাকে, সে রোগে রোযা ভাঙ্গা জায়েয হবে। তবে অবশ্যই এক্ষেত্রে কোন দ্বীনদার ডাক্তারের পরামর্শ থাকা শর্ত, কিংবা নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হতে হবে, শুধু নিজের কাল্পনিক খেয়ালের বশীভূত হয়ে আশংকাবোধকরে রোযা ছাড়া কিছুতেই দুরস্ত হবে না। (দেখুনঃ বাদায়েউসর সানায়ে, বেহেশতী জেওর)
প্রশ্ন:গর্ভবতী মহিলার জন্য রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: গর্ভবতী মহিলা রোযা রাখার কারণে তার নিজের বা সন্তানের প্রাণহানীর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশংকা হলে, তার জন্য রোযা না রাখা বা রেখে ভাঙ্গা জায়েয, তবে উভয় অবস্থায় পরে কাযা করে নিতে হবে। (দেখুনঃ আদ্দুররুল মুখতার)
প্রশ্ন:দুগ্ধদানকারিনী মহিলার রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: রোযার কারণে কোন মহিলার দুধ শুকিয়ে যাবে, আর সন্তানের সমূহ কষ্ট হবে-এরূপ নিশ্চিত হলে তার জন্য তখন রোযা ছাড়া জয়েয, পরে তা কাযা করে নিতে হবে। (দেখুনঃ জামে তিরমিযী)
প্রশ্ন:মেয়েদের মাসিক চলাকালীন বা নেফাস অবস্থায় রোযা রাখার হুকুম কী?
উত্তর: রোযাতে মাসিক শুরু হয়েছে বা বাচ্চা প্রসবের পর নিফাস চলছে। তাহলে মাসিক ও নিফাসকালে রোযা রাখা যাবে না। পবিত্র হওয়ার পর তা কাযা কারে নিতে হবে। (দেখুনঃ বেহেশতীজেওর)
প্রশ্ন:রোযা রাখার পর মাসিক¯্রাব শুরু হলে কি করবে?
উত্তর: রোযা রাখার পর মাসিকস্্রাব শুরু হলে ঐ রোজা হবে না, তা পরবর্তিতে কাজা করতে হবে।
প্রশ্ন: রমযানের দিনে হায়েয-নেফাস (ঋতু¯্রাব ও প্রসবকালীন ¯্রাব) বন্ধ হলে কি করবে?
উত্তর: রমযানের দিনে হায়েয- নেফাস (ঋতু¯্রাব ও প্রসবকালীন ¯্রাব) থেকে পাক হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের সম্মান রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরী । উক্ত ওযরে ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর সাথে এ দিনের রোযাও কাযা করতে হবে ।
(দেখুন ঃ শামী ২/ ৪৩৮, তাতার খানিয়া )
প্রশ্ন: বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে সক্ষম না হলে, কি করবে?
উত্তর: কেউ বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে সক্ষম না হলে, তার রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন গরীবকে দু বেলা খাবার খাওয়াবে অথবা পৌঁনে দু’কেজি গমের মুল্য সদকা করে দিবে।
(দেখুন ঃ আলমগীরী ১/ ২০৭, বাদায়েউস সানায়ে ২/ ২৫২)
প্রশ্ন: এমন বলপ্রয়োগকৃত ব্যক্তি যে, রোযা না ভাঙ্গলে মেরেই ফেলবে কি করবে?
উত্তর: কাউকে যদি কোন সন্ত্রাসী এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করে যে, রোযা না ভাঙ্গলে মেরেই ফেলবে বা কোন অঙ্গ নষ্ট করে দিবে বা খুব প্রহার করবে তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয। পরে কাযা করে নিবে।
(দেখুনঃ শামী ২/ ৪২১, বাদায়েউস সানায়ে ২/ ২৫০)

প্রশ্ন: এক স্থানে রোযা শুরু করে অন্যস্থানে যাওয়ায় রোযা কম -বেশি হলে কি করবে? যেমন-
ধরে নেওয়া যাক কোন ব্যাক্তি জাপানে রোযা শুরু করল সে দেশে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এবং ১৫ই রমযান সে সৌদি গিয়ে দেখল ওই দিন ১৭/১৮ রমযান। লোকটি যে দিন সৌদিবাসির সাথে ঈদ করল তার আগের দিন পর্যন্ত রোযা হয়েছে ২৭ বা ২৮টি। এখন তার করণীয় কি?
এমনিভাবে উদাহরণ স্বরুপ, সাউথ আফ্রিকায় রোযা শুরু করে কেউ ইন্দোনেশিায়ায় চলে গেলে তার রোযা ৩০ টি পুরো হওয়ার পরও ইন্দোনেশিয়াবাসীদের সে হয়ত আরো ২টি বা ১ টি রোযা রাখতে দেখতে পারে। এক্ষেএে লোকটি কত দিন রোযা রাখবে ?
মোটকথা এক দেশে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোযা শুরু করে অন্য দেশে গিয়ে তা সমাপ্ত করলে ওই দেশের চাঁদের হিসাবে রোযার সংখ্যা কমে বা বেড়ে গেলে তখন ওই রোযাদার ব্যাত্তির করণীয় কী ?
উত্তর: এ প্রশ্নের জবাবের আগে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে, চান্দ্রমাসের সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সময়কাল হল যথাক্রমে ২৯ ও ৩০ দিন। একটি হাদীসে রাসূলে কারীম (সা:) সুস্পষ্টভাবে এ ঘোষণা দিয়েছেন। এরই আলোকে সমাস্যাটির সমাধান হল –
রোযার মাসে স্থান পরিবর্তনের কারণে যে ব্যক্তির রোযা ৩০টি পুরো হয়ে যাওয়ার পরও ওই দেশের মুসলমানদের রমযান মাস পূর্ণ না হয় সে ওই দেশের লোকজনের সাথে ঈদ করবে। আর রমযান শেষ হওয়া পর্যন্ত রোযা রেখে যাবে। যাতে রমযানের পবিত্রতা ক্ষুণœ না হয়। আর যে ব্যত্তি ২৭ বা ২৮ রোযা পূর্ণ করার পরই তার (সফর করে আসা) দেশে ঈদের চাঁদ ওঠে যায় সে ওই দেশবাশীর সঙ্গে ঈদ করবে এবং পরবর্তী সময়ে একটি বা দুটি রোযা রেখে পূর্ণ করবে । তবে ওই জায়গায় যদি ২৯ রোযার পরই ঈদের চাঁদ দেখা গিয়ে থাকে তাহলে ২৯টি পুরো করলেই চলবে।

প্রশ্ন:রোজাবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা যাবে কি না?
উত্তর: ইনহেলার ব্যবহার করলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ তার মধ্যে এক ধরণের তরল ঔষধ রয়েছে। শিশির মুখ একবার টিপলে শিশির আকার ভেদে ঐ পরিমাণের একশ কিংবা দুইশ ভাগের এক ভাগ বেরিয়ে আসে। অতি স্বল্প পরিমাণে গ্যাসের ন্যায় বের হওয়ার কারণে ঔষধটিকে বাতাস জাতীয় মনে করা ঠিক হবে না। বাস্তবে ঔষধটি দেহ বিশিষ্ট। কারণ কাঠ ইত্যাদি কোন বস্তুতে ঔষধটি স্প্রে করা হলে দেখা যাবে ঐ বস্তুটি ভিজে গিয়েছে। তাই এতে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২৩)
প্রশ্ন:রোজাবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম কি?
উত্তর: রোজাবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করার সঠিক নিয়ম হল, কোন কোন চিকিৎসক বলেন সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেয়ার পর সাধারণত ইফতার পর্যন্ত আর নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, তাই এভাবে ইনহেলার ব্যবহার করে রোযা রাখা চাই। হ্যাঁ, যদি কারো বক্ষব্যধি এমন মারত্মক আকার ধারণ করে যে, ইনহেলার নেয়া ব্যতীত ইফতার পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায় না, তাদের ক্ষেত্রে শরীয়তে এ সুযোগ রয়েছে যে তারা প্রয়োজন ভেদে ইনহেলার ব্যবহার করবে আর পরবর্তীতে এ রোজা কাযা করে নিবে। আর কাযা সম্ভব না হলে ফিদইয়া আদায় করবে।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২৪)
প্রশ্ন:কানে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার করলে রোজা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: কানে ড্রপ, ওষুধ, তেল ও পানি ইত্যাদি দিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ, কান থেকে গলা পর্যন্ত কোন রাস্তা নেই। তাই কানে কিছু দিলে তা গলায় পৌঁছে না। আদি যুগে ছিদ্র পথ আছে বলে ধারণা করা হতো বিধায় সে যুগের কিতাবাদিতে রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২২)
প্রশ্ন:নাকে ঔষধ, পনি বা ড্রপ ব্যবহার করলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: নাকে ঔষধ বা পনি দিলে যদি তা পেটে বা দেমাগে পৌঁছে যায় তাহলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে অন্যথায় ভঙ্গ হবে না। কারণ, নাক রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা। নাকে ড্রপ ইত্যাদি দিলে তা গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
(দেখুনঃ আপকে মাসাঈল ৩/৩৬৮, ফাতাওয়ায়ে শামী ৩/৩৬৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া ১০/১৩৯)
প্রশ্ন:রোযা অবস্থায় শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযা ভাঙ্গবে কি না? তেমনি সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে রোযা ভেঙ্গে যায় কি না?
উত্তর: শরীর থেকে রক্ত বের হলে রোযার কোন ক্ষতি হয় না এবং সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে রোযা ভাঙ্গে না। তবে ইচ্ছা করে এ পরিমাণ রক্ত বের করা ঠিক নয়, যার কারণে রোযা রাখার শক্তি হারিয়ে ফেলার আশংকা হয় বা রোযা রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
(দেখুনঃ আপকে মাসাঈল- ৩/৩৭১ )
প্রশ্ন:ইনজেকশন বা টিকার কারণে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: ইনজেকশন বা টিকা কোনটার কারণেই রোযা ভাঙ্গবে না। তবে একান্ত ওজর ছাড়া গ্লুকোজ জাতীয় ইনজেকশন দেওয়া (যা খাবারের কাজ দেয়) মাকরূহ তাহরীমী।
(দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে মাহমূদিয়া- ১০/১৫২ )
প্রশ্ন: রমযানের দিনে (ঋতু¯্রাব ও প্রসবকালীন ¯্রাব) হায়েয-নেফাস বন্ধ হলে কি করবে?
উত্তর: রমযানের দিনে হায়েয- নেফাস (ঋতু¯্রাব ও প্রসবকালীন ¯্রাব) থেকে পাক হলে অবশিষ্ট দিন রমযানের সম্মান রক্ষার্থে পানাহার থেকে বিরত থাকা জরুরী । উক্ত ওযরে ছুটে যাওয়া রোযাগুলোর সাথে এ দিনের রোযাও কাযা করতে হবে ।
(দেখুন ঃ শামী ২/ ৪৩৮, তাতার খানিয়া )
প্রশ্ন: রমযানে ঔষদের মাধ্যমে মহিলাদের মাসিক নিয়ন্ত্রণ করা যাবে কি না?
উত্তর: এ ব্যাপারে শরীয়তের মাসআলা হচ্ছে, যে পর্যন্ত একজন মহিলার মাসিক দেখা না দিবে ওই পর্যন্ত সে নিয়মিত নামায -রোযা করে যাবে, যদিও কৃত্রিম পদ্ধতিতে মাসিক বন্ধ রাখা হোক না কেন। অবশ্য এ ধরনের পন্থা অবলম্বনকে শরীয়ত উৎসাহিত করে না। কারণ তাদের জন্য তো বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছেই। তাছাড়া এ ধরনের পদ্ধতি স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর কি না সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেওয়া জরুরী। (দেখুন- মাসিক আলকাউসার প্র¤েœাত্তরসমগ্র)
প্রশ্ন : এন্ডোসকপি কি ? রমযানে তা করা যাবে কি না ?
উত্তর : এন্ডোসকপি একটি ডাক্তারী পরীক্ষা। এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যার মাথায় বাল্বজাতীয় একটি বস্তুু থাকে। নালটির অপর প্রান্ত থাকে মনিটরের সাথে। এভাবে চিকিৎসকগণ রোগির পেটের অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। যেহেতু এন্ডোসকপিতে নল বা বাল্বের সাথে কোন মেডিসিন লাগানো হয় না, তাই এর কারণে সাধারণ অবস্থায় রোযা ভাঙ্গার কথা নয়। কিন্তুু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার থেকে জানা গেছে এবং প্রত্যক্ষভাবে দেখা গেছে যে,
এন্ডোসকপির সময় টেস্টের প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ প্রায় সময় নলের ভেতর দিয়ে পানি ছিঠিয়ে থাকেন ; যা সরাসরি রোযা ভঙ্গের কারণ। সুতরাং যদি কারো ক্ষেত্রে পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই টেস্টটি সম্পন্ন হয় তা হলে তার রোযা কোন ক্ষতি হবে না। অন্যথায় রোযা নষ্ট হয়ে যাবে । এন্ডোসকপি করা হয় খালি পেটে , তাহলে একজন রোযাদার রোযা অবস্থায় এ টেস্টটি না করাতে পারলে কীভাবে তা করবে?
এ প্রশ্নের জবাবে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন এক্ষেত্রে রোগীর পানি পান করতে বাধা নেই । তাই রোগী ইচ্ছা করলে শুধু পানি দ্বারা ইফতার করে টেস্টটি করিয়ে নিতে পারে। এন্ডোসকপির মতই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।
প্রশ্ন : ইনজিওগ্রাম করালে রোযা ভঙ্গ হবে কি না ?
উত্তর : সাধারণ পদ্ধতির ইনজিওগ্রামের কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না ।
প্রশ্ন : ইনসুলিন ও ইনজেকশন- নিলে রোযার কোন ক্ষতি হবে কি না ?
উত্তর : ইনসুলিন বা ইনজেকশনের কারনে রোযা ভাঙ্গে না । এমনিভাবে একজন রোযাদার ইফতারের
আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যে সকল ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওযর ছারা তা নিলে রোযা মাকরূহ হবে ।
প্রশ্ন : রোযায় মস্তিষ্ক অপারেশন করার হুকুম কি ?
উত্তর : রোযা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। যদিও মস্তিষ্কে কোন তরল কিংবা শক্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয় । কেননা মস্তিষ্ক থেকে গলা পর্যন্ত কোন ছিদ্র ও পথ নাই । তাই মস্তিষ্কে কোন কিছু দিলে তা গলায় পৌছে না। পূর্ব যুগে ছিদ্র ও পথ আছে ধারনা করেই এতে রোযা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বিভিন্ন কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় অক্সিজেন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে কি না ?
উত্তর : নাকে অক্সিজেন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না । কারণ অক্সিজেন দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু নয় । রোযা ভঙ্গ হতে হলে দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু দেহের অভ্যন্তরের গ্রহনযোগ্য জায়গায় পৌছাতে হয়।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২৫)
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় রক্ত দেওয়া ও নেওয়া যাবে কি না?
উত্তর: রক্ত দিলে বা নিলে কোন অবস্থাতেই রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ রক্ত দিলেতো কোন বস্তু দেহের অভ্যন্তরে ঢুকেনি, তাই এতে রোযা ভঙ্গ হওয়ার প্রশ্ন আসে না। আর রক্ত নিলে যদিও তা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহনযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না বিধায় এতে রোযা ভঙ্গ হবে না ।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২৬)
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় স্যালাইন নিলে রোযা হবে কি না?
উত্তর: স্যালাইন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ স্যালাইন নেওয়া হয় রগে। আর রগ রোযা ভঙ্গের গ্রহনযোগ্য ছিদ্র ও রাস্তা নয়। তবে রোযার দূর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে স্যালাইন নেওয়া মাকরূহ।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- ৩২৬)
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় ইনসুলিন ব্যবহার করা যাবে কি না?
উত্তর: ইনসুলিন নিলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায়ও পৌঁছে না।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা -৩২৭)
প্রশ্ন: পেশাবের রাস্তায় ওষুধ ব্যবহার করলে রোযা হবে কি না?
উত্তর: পেশাবের রাস্তায় ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ পেশাবের রাস্তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়। তেমনি ভাবে পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন বস্তু ভেতরে প্রবেশ করলে তা মুত্রথলীতে পৌঁছে মাত্র আর মুত্রথলী রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি জায়গা নয় ।
(দেখুন ঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা-৩২৭)
প্রশ্ন: যোনিদ্বারে ওষুধ ব্যবহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি না?
উত্তর: যোনিদ্বারে ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ যোনিদ্বার রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয়। তেমনিভাবে যোনিদ্বার দিয়ে কোন বস্তু ভেতরে প্রবেশ করলে তা এমনকোন খালি জায়গায় ঢুকে না, যেখানে ঢুকলে রোযা ভঙ্গ হয়। বরং জরায়ু তথা গর্ভাশয়ে ঢুকে আর গর্ভাশয় রোযা ভঙ্গের গ্রহনযোগ্য খালি জায়গায় নয়। (দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা – ৩২৮)
প্রশ্ন: সিষ্টোসকপি অর্থাৎ পেশাবের রাস্তায় ক্যাথেটার লাগালে রোযা ভঙ্গ হবে কি না?
উত্তর: সিষ্টোসকপি করলে রোযা ভাঙ্গবে না। অর্থাৎ পেশাবের রাস্তায় ক্যাথেটার লাগালে রোযা ভঙ্গ হবে না।
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় কপার-টি করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি না?
উত্তর: রোযাবস্থায় কপার-টি করলে রোযা ভাঙ্গবে না । কপার- টি বলা হয়, যোনিদ্বারে প্লাস্টিক ফিট করা যাতে সহবাসের সময় বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। এমন করলে রোযা ভঙ্গ হবে না। কারণ যোনিদ্বার রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণ যোগ্য রাস্তা নয়। তবে কপারÑটি লাগিয়ে সহবাস করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টিই ওয়াজিব হবে।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা-৩২৮ -৩২৯)
প্রশ্ন: রোযাবস্থায় সাপজিটরিÑভোল্টালিন ব্যবহার করলে রোযা ভঙ্গ হবে কি না?
উত্তর: সাপজিটরিÑভোল্টালিন ব্যবহার করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অতিরিক্ত জ¦র কিংবা খুব বেশি ব্যাথা দেখা দিলে ওষুধটি মলদ্বারে ব্যবহার করা হয়। এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। কারণ, যে সমস্ত রাস্তা দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে কোন কিছু প্রবেশ করলে রোযা ভেঙ্গে যায় মলদ্বার তার একটি।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা-৩২৮ -৩২৯)
প্রশ্ন: ডুশ দিলে রোযা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: ডুশ নিলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ ডুশ মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে। মলদ্বার রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণ যোগ্য রাস্তা এবং ডুশ যে জায়গায় পৌঁছে তা রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালিস্থান।
(দেখুনঃ ইসলামওআধুনিক চিকিৎসা-৩২৮ -৩২৯)
প্রশ্ন: ‘প্রক্টোসকপি’ করলে রোজা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: ‘প্রক্টোসকপি’ করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে। পাইলস, ফিশার, ফিষ্টুলা, অর্শ, বুটি ও হারিশ ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে “প্রক্টোসকপি’ বলে । মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে এ পরিক্ষাটি করা হয়। যদিও নলটি পুরোপুরি ভিতরে ঢুকে না, একাংশ বাইরে থাকে কিন্তু যাতে রোগী ব্যাথা না পায় সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় পিচ্ছিল কোন বস্তু ব্যবহার করা হয়। ডাক্তারদের মতানুসারে যদিও ঐ পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সাথে চিমটে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে ভেতরে থাকে না, আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে চলে আসে শরীর তা চোষে না তথাপিও ঐ বস্তুটি ভেজা হওয়ার কারণে এবং কিছু সময় ভেতরে থাকার দরুণ রোযা ভেঙ্গে যাবে। আর এর মধ্যেই সতর্কতা।
(দেখুনঃ ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা-৩২৮ -৩৩০)
প্রশ্ন: ল্যাপারসকপিÑ বায়োপসি কি? এতে রোজা ভাঙ্গবে কি না?
উত্তর: পেট ছিদ্র করে সিক জাতীয় একটি মেশিন ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের কোন অংশ, গোস্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য বের করে আনা হয়। এতে রোযা ভঙ্গ হবে না । কারণ রোযা ভঙ্গ হওয়ার জন্য রোযা ভঙ্গকারী বস্তু ভেতরে পরিপূর্ণ ভাবে প্রবেশ করা ও প্রবেশের সাথে সাথে বের না হয়ে ভেতরে এতক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী থাকা আবশ্যক, যতক্ষণ ভেতরে থাকলে ঐ বস্তু বা তার অংশবিশেষ হজম হয়ে যায়। এখানে এর কোনটিই পাওয়া যায়নি। তবে সিকের মধ্যে কোন প্রকার মেডিসিন লাগানো থাকলে এবং তা গলদ্বার থেকে নিয়ে মলদ্বার পর্যন্ত নাড়িভুঁড়ির যে কোন জায়গায় পৌঁছলে রোযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
(দেখুনঃ ইসলামওআধুনিক চিকিৎসা-৩২৮ -৩৩০)


প্রশ্ন:রোযার কাফ্ফারা কখন ওয়াজিব হবে?
উত্তর: রমযানের রোযা রেখে দিনের বেলায় শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য কোন ওযর ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে বা সহবাস করলে কিংবা ঔষধ সেবন করলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই ওয়াজিব হবে। তেমনি রোযা রেখে বিড়ি, সিগারেট বা হুক্কা পান করলেও রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে। । বন্ধু প্রিয়জন কিংবা স্ত্রীর থুথু খাওয়াসহ ইত্যাদি করণে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়ই জরুরী হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, রদ্দুল মুহতার, আল-বাহরুর রায়েক)
প্রশ্ন:রোযার কাফ্ফারা কি?
উত্তর: রোযার কাফ্ফারা হল, একটি গোলাম আযাদ করা। আর তা সম্ভব না হলে ৬০টি রোযা (একটি কাযা বাদেও) এই ৬০টি রোযা একাধারে রাখতে হবে। মাঝখানে ছুটে গেলে আবার পুণরায় পূর্ণ ৬০টি একাধারে রাখতে হবে। এই ৬০ দিনের মধ্যে নেফাস বা রমযানের মাস এসে যাওয়ার কারণে বিরতি হলেও কাফ্ফরা আদায় হবে না। বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোযা রাখার সামর্থ না থাকলে পূর্ণ খোরাক খেতে পারে- এমন ৬০জন মিসকীনকে অথবা এক জনকে ৬০দিন দু’বেলা পরিতৃপ্তির সাথে খাওয়াতে হবে অথবা সদকায়ে ফিতরয়ে যে পরিমাণ গম বা তার মূল্য দেয়া হয় প্রত্যেককে সে পরিমাণ দিতে হবে। এই গম ইত্যদি বা মূল্য দেয়ার ক্ষেত্রে এক জনকে ৬০ দিনেরটা এক দিনেই দিয়ে দিলে কাফ্ফারা আদায় হবে না । তাতে মাত্র এক দিনের কাফ্ফারা ধরা হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী, রদ্দুল মুহতার, আল-বাহরুর রায়েক)
প্রশ্ন:রোযার ফিদইয়া কখন ওয়াজিব হবে?
উত্তর: যাদের রোযা রাখার সামর্থ নেই এবং পরবর্তী সময়ে কাযা করতে পারবে এমন সম্ভাবনাও নেই , এমন ব্যক্তিবর্গ রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া প্রদান করবে। যেমন- এমন বৃদ্ধা যার রোযা রাখার শক্তি নেই এবং এ বয়সে সে আর সামর্থবান হবে বলেও আশা করা যায় না। অথবা এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তি যার আর সুস্থ্য হওয়ার আশা নেই এ ধরণের লোকেরা রোযা না রেখে ফিদইয়া দিবে। (দেখুনঃ ফাতহুল কাদীর)
প্রশ্ন:রোযার ফিদইয়া কি?
উত্তর: ফিদইয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ। রোযা রাখতে না পারলে বা কাযা আদায় করতে না পারলে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তাকে ফিদইয়া বলে। এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদইয়া ফরজ হয়। এক ফিদইয়া হল সাদকায়ে ফিতরার সমপরিমাণ। অর্থাৎ- পৌনে দুই কেজি গম বা তার মূল্য অথবা সে মূল্যের সমপরিমাণ কোন দ্রব্য কোন মিসকীনকে দান করা অথবা এক একটি রোযার পরিবর্তে একজন মিসকিনকে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ানো। (দেখুনঃ ফাতহুল কাদীর)
প্রশ্ন:ফিদইয়া আদায়ের পর যদি কোন ব্যক্তি নিজে সুস্থ হয়ে যায় তাহলে সে কি করবে?
উত্তর: ফিদইয়া আদয়ের পর যদি সে পুণরায় সুস্থ হয়ে যায় তাকে আবর ঐ রোযাগুলো কাযা করতে হবে। এবং যে ফিদইয়া দান করেছিল তার ছাওয়াব পৃথকভাবে সে পেয়ে যাবে। (দেখুনঃ আল বাহরুর রায়েক)

প্রশ্ন:সাহ্রী খাওয়ার হুকুম কি?
উত্তর: সাহ্রী খাওয়া সুন্নাত। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ওয়ালাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সাহ্রী খাও, কেননা সাহ্রী খাওয়াতে বরকত রহিয়াছে। (দেখুনঃ ইবনে মাযা)
প্রশ্ন:সেহ্রী খাওয়ার অর্থ কি?
উত্তর: রোযা রাখার উদ্দেশ্যে রাতের শেষাংশে কিছু খাওয়াকে সাহ্রী বলে। অর্ধরাতের পর থেকে সুবহে সাদেকের পূর্বপর্যন্ত সাহ্রী খাওয়াও বরকতপূর্ণ কাজ। সাহ্রী পেট ভরে খাওয়া জরুরী নয়। ক্ষুধা না থাকলে সাহরীর নিয়তে এক ঢোক পানি পান করলেও সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে। (দেখুনঃ আদ্দুররুল মুখতার)
প্রশ্ন:রাতের কোন সময়ে সাহ্রী খাওয়া উত্তম?
উত্তর: সাহরী যথাসম্ভব দেরী করে খাওয়া অর্থাৎ- সুবহে সাদেকের কাছাকাছি সময়ে খাওয়া মুস্তাহাব। তবে এতো দেরী করে সাহরী খাওয়া মাকরূহ যাতে সুবহে সাদেক হয়ে যাওয়া আশংকা হয়। (দেখুনঃ ফাতওয়াযে আলমগীরী)
প্রশ্ন:সাহ্রী খাওয়া সম্ভব না হলে রোযা রাখা যাবে কি না?
উত্তর: যদি ঘুম না ভাঙ্গার কারণে বা অন্য কোন কারণে সাহরী খেতে না পারে তাহলে না খেয়েই রোযা রেখে দিবে। সাহরী না খাওয়ার কারণে রোযা না রাখা নাজায়েয ও হারাম। (দেখুনঃ হেদায়া)

প্রশ্ন:সাহরীর সময় আছে মনে করে খেতে থাকল, পরে জানা গেল সময় ছিলনা তাহলে রোযা হবে কি না, না হলে পুরো দিন কি করবে?
উত্তর: সাহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করল অথচ পরে জানা গেল যে, তখন সাহরীর সময় ছিল না, তাহলে রোযা হবে না;তবে সারাদিন তাকে রোযাদারের ন্যায় থাকতে হবে এবং রমযানের পর ঐ দিনের রোযা কাযা করতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়াযে আলমগীরী)
ইফতার
প্রশ্ন:ইফতার কখন করা ভাল?
উত্তর: সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মোস্তাহাব। বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ। (দেখুনঃ রদ্দুল মাহতার)
প্রশ্ন:মেঘের দিনে কখন ইফতার করবে?
উত্তর: মেঘের দিনে কিছু দেরী করে ইফতার করা ভাল। মেঘের দিনে ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে সূর্য অস্ত গিয়েছে বলে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত ছবর করা ভার। শুধু ঘড়ি বা আযানের উপর নির্ভর করা ভাল নয়, কারণ তাতে ভুলও হতে পারে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:প্রথমে কি দিয়ে ইফতার করা উত্তম?
উত্তর: সবচেয়ে উত্তম হল, খোরমার দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা, তারপর পানি দ্বারা। (দেখুনঃ আহকামে জিন্দেগী)
প্রশ্ন:ইফতারের সময় কি দোয়া পড়বে?
উত্তর: ইফতার করার পূর্বে নি¤েœাক্ত দু‘আ পাঠ করবে। দু‘আ পাঠ করা মুস্তাহাব।
اَلّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ.
(দেখুনঃ আহকামে জিন্দেগী)
প্রশ্ন:ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে ইফতার করার পর প্রকাশ পেল এখনো সময় বাকী এখন কি হবে ?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত অবস্থায় তার ঐ রোযা হবে না। তাকে ঐ রোযাটি পুনরায় কাযা করে নিতে হবে। (দেখুনঃ খুলাসাতুল ফাতওয়া)
তারাবীহ
প্রশ্ন:জামাতের সাথে তারাবীহ ছুটে গেলে বিতর কখন পড়বে?
উত্তর: এমন ব্যক্তি জামাতের সাথে ইমামের পিছনে বিতর নামায আদায় করার পর ছুটে যাওয়া তারাবীহ নামাযের রাকাতগুলো আদায় করতে হবে। তবে তারাবীহ নামাযের ফাঁকে ফাঁকেও ছুটে যাওয়া রাকআতগুলো পড়ে নিতে পারবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:তারাবীহ নামাযে কুরআন খতম করার হুকুম কি?
উত্তর: রামাযান মাসে তারাবীহের জামাতে পবিত্র কুরআন শরীফ খতম করা সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আলাল কিফায়া। (দেখুনঃ ফাতাওয়া মাহমূদিয়া)
প্রশ্ন:তারাবীহের নামাযে কেরাআত পড়ার মুস্তহাব তরীকা কি?
উত্তর: তারাবীহের নামাযে অন্যান্য মুস্তাহাবের ন্যায় সূরায়ে ফাতিহা মুস্তাহাব তরীকায় আদায় করা উচিত। অর্থাৎ সাত আয়াত সাত শ্বাসেই পড়বে। কেননা তারাবীহর নামাযেও তাড়াহুড়া করা, আঊযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ বর্জন করা, স্থিরতা রক্ষা না করা মাকরূহ। সে হিসেবে সূরায়ে ফাতিহা মিলিয়ে না পড়ে ধীরস্থির ভাবে সাত শ্বাসে পড়াই উত্তম। (দেখুনঃ আদ্দুররুল মুখতার)
প্রশ্ন:তারাবীহের নামাযে চার রাকাআতের পরে “সুবহানা যিল মুলকি” দোয়াটি পড়ার হুকুম কি?
উত্তর: তারাবীহ নামযে প্রতি চার রাকআত অন্তর যে তারবীহা বা কিছুক্ষণ বসে থাকা হয়, সে সময় আল্লাহ তাআলার প্রশংসা সম্বলিত যে কোন দুআ দরূদ ও ইস্তিগফার পাঠ করা বা চুপ থাকা সবই জায়িয আছে। প্রচলিত প্রসিদ্ধ দু’আটিতে আল্লাহর প্রশংসা সম্বলিত হওয়ার কারণে কেউ জরুরী মনে না করে পড়লে তা জায়িয হবে। শরয়ী দৃষ্টিকোণে তাতে কোন দোষ নেই। তা বিদআতও নয়। তবে কেউ এটা পড়া জরুরী মনে করলে তার জন্য বিদআত হবে। জরুরী মনে না করে সব সময় পড়লেও বিদআত হবে না। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

প্রশ্ন:গরমের কারণে বারান্দায় বা মসজিদের ছাদে তারাবীর নামায পড়া যাবে কি না?
উত্তর: জামাতে নামায আদায়ের ক্ষেত্রে নিয়ম হল, মসজিদের ভিতরে মূল অংশে তা আদায় করা। বিনা ওজরে বা সামান্য ওজরে মসজিদের মূল অংশ খালি রেখে বারান্দায় বা ছাদে জামাত করা অনুচিত।
তবে যদি গরম এত বেশি হয যে, দীর্য সময় ধরে নামায পড়তে গিয়ে মুসল্লীদের নামাযে একাগ্রতা ব্যাহত হওয়ার আশংকা থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে মসজিদের বারান্দায় বা ছাদে গিয়ে তারাবীহর জামাত করা যেতে পারে।
(দেখুন- ফাতাওয়ায়ে খানিয়া ১/২৪৪, আল মুহীতুল বুরহানী- ২২৬৪, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া ৫/৩২২)

প্রশ্ন:নাবালিগ হাফিজের পিছনে তারাবীহের নামায সহীহ হবে কি না?
উত্তর: না, ফরজ, সুন্নাত কোন নামাযেই নাবালিগ এর ইমামতি সহীহ নয়। তাই তারাবীহ নামায নাবালিগ হাফিজের পিছনে পড়া যাবে না। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্ন:নাবালিগ হাফিজের পিছনে তারাবীহের নামায আদায় করে থাকলে তা কাযা করতে হবে কি না?
উত্তর: তারাবীহ সুন্নাত নামায। আর সুন্নাতের কাযা নেই। তাই তারাবীর নামাযের কাযা নেই। সুতরাং বিগত দিনে নাবালিগের পিছনে পড়া তারাবীর কাযা করতে হবে না।
(দেখুন- আল বাহরুর রায়িক ১/৩৯৯, তাহতাবী আলাল মারাকী ২৮৮)

প্রশ্ন:তারাবীহ পড়ানোর পর টাকা নেওয়া যাবে কি না?
উত্তর: যদি তারাবীহ-এর টাকা মুসল্লীদের থেকে চাঁদা করে দেওয়া হয় তবে তা নেওয়া যাবে না। কারণ এভাবে আদায়কৃত টাকা হাফেজ সাহেব শর্ত করে নেন বা তাকে জোর করে দেওয়া হোক সর্বাবস্থায় তা খতমের বিনিময় আর খতমে তারাবীর বিনিময় নেওয়া নাজায়েয। অবশ্য কেউ যদি খতমে তারাবীর বিনিময় দেওয়ার নিয়ত না করে ব্যক্তিগত ভাবে হাফেজ সাহেবকে মহব্বত করে কোন কিছু হাদিয়া দিতে চায় তাহলে তা হাদিয়া হিসেবেই ধর্তব্য হবে। হাফেজ সাহেব তা নিতে পারবেন। দেখুন- মুসনাদে আহমাদ ৩/৪২৮, আলমগীরী ১/১১৬, মাসিক আলকাউসার, জুন, ২০০৫০)
প্রশ্ন:খতমে তারাবীর সময় নামাযের রুকু বা সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করা যাবে কি না?
উত্তর: নামাযের রুকু বা সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতে সিজদা আদায়ের জন্য শর্ত হল সিজদার আয়াতের পর দুই আয়াতের অধিক না পড়া। এ শর্তের প্রতি খেয়াল রেখে নামাযের রুকু বা সিজদার মাধ্যমে তিলাওয়াতের সিজদা আদায় করলে তা সহীহ হবে। তবে এ কথাও মনে রাখতে হবে যে, সিজদায়ে তিলাওয়াত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত । তাই নামাযের মধ্যেও এ সিজদা ভিন্নভাবে আদায় করা উচিত। সুতরাং নামাযের রুকু-সিজদার মাধ্যম তা আদায়ের অভ্যাস বানিয়ে নেওয়া সমীচীন নয়। (দেখুন- আদ্দুররুল মুখতার ২/১১১)
প্রশ্ন:বিনা ওযরে তারাবীর নামায বসে পড়লে সহীহ হবে কি না ?
উত্তর: সুস্থ ব্যক্তির জন্য তারাবীহর নামায দাঁড়িয়ে আদায় করাই সুন্নাত। বিনা ওযরে বসে আদায় করলে সুন্নাত অনুযায়ী আদায় হবে না। তবে কেউ দাঁড়িয়ে পড়ার সামর্থ থাকা সত্বেও বসে আদায় করলে তারাবীহ আদায় হয়ে যাবে, তবে বসে পড়লে দাঁড়িয়ে পড়ার চেয়ে অর্ধেক সাওয়াব হবে।
(দেখুন- ফতাওয়ায়ে খানিয়া ১/২৪৩, আল মুহীতুল বুরহানী-২/২৫৫)
প্রশ্ন:হাফেজ সাহেবগণ রমযান মাসে তারাবীর নামযে কুরআন শরীফ খতম করার পর সূরা বাকারার কিছু অংশ পড়ে থাকেন। এ ব্যাপারে শরীয়তের বিধান কী?
উত্তর: এটি একটি মুস্তাহাব আমল। হাদীস শরীফে কুরআন মাজীদ একবার খতম হলে পুনরায় তা শুরু করার কথা এসেছে। সুতরাং এ আমল যেমনিভাবে নামাযের বাইরে উত্তম তেমনিভাবে নামাযের খতমেও তা অনুসরণীয়। অবশ্য ১৯তম রাকাতে খতম করে ২০ তম রাকাতে শুরু থেকে না পড়ে উত্তম হল, ১৮তম রাকাতে খতম করে শেষ দুই রাকাতে শুরু থেেেক কিছু তিলাওয়াত করে নেওয়া। যেন প্রথম ও দ্বিতীয় রাকাতে তিলাওয়াতের ধারাবাহিকতা বহাল থাকে।
(দেখুন- জামে তিরমিযী ২/১৪৩, আল ইতকান ১/৩০০, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৯৮)
প্রশ্ন:খতমে তারাবীর ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেব প্রত্যেক সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ আস্তে পড়বে না জোরে?
উত্তর: নামাযে পুরো কুরআন মজীদ খতম করলে যে কোনো একটি সূরার শুরুতে একবার বিসমিল্লাহ উচ্চ স্বরে পড়া নিয়ম। তাই একবারই উচ্চস্বরে বিসমিল্লাহ পড়বে। একটি সূরা ছাড়া বাকি সূরাগুলোতে নিঃশব্দে বিসমিল্লাহ পড়বে। নামাযে সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ উচ্চস্বরে পড়া অনুত্তম।
(দেখুন- আদ্দুররুল মুখতার ১/৪৯১, ইমদাদুল আহকাম ১/৩২৮)
প্রশ্ন:রমযানে যদি এশা না পেয়ে তারাবীহ পায় তাহলে আগে এশা পড়বে না তারাবীহ?
উত্তর: তারাবীর সময় এশার পর শুরু হয়। এশা আদায়ের আগে তারাবীহ সহীহ হয় না। তাই রমযানে এশা না পেলে আগে এশা আদায় করে নিবে। অত:পর তারাবীহ পড়বে।
(দেখুন- বাদায়েউস সানায়ে ২/২৭৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১১৭)
প্রশ্ন:যদি কারো কয়েক রাকাত তারাবীহ ছুটে যায় তাহলে তা বিতরের আগে না পরে আদায় করবে?
উত্তর: তারাবীহ ছুটে গেলে নিয়ম হল, ইমামের সাথে যথানিয়মে বিতর পড়ে নিবে। অত:পর ছুটে যাওয়া তারাবীহ গুলো একাকী পড়ে নিবে। কারণ, বিতরের পরও তারবীহ পড়া যায়। তাই চাইলে বিতরের পর পড়া যাবে।
(দেখুন- আল বাহরুর রায়েক ২/৬৭, ফাতাওয়ায়ে খানিয়া ১/১৩৫)
প্রশ্ন:তারাবীর নামাযে হাফেজ সাহেব তিলাওয়াতে সিজদা আদায় করতে ভুলে গেলে ঐ নামায আবার পড়েত হবে কি না?
উত্তর: নামাযের তিলাওয়াতে সিজদা নামাযের বাইরে আদায় করা যায় না। তাই ঐ সিজদা আর আদায় করা যাবে না এবং এ কারণে ঐ নামাযও পূণরায় পড়তে হবে না। কারণ সিজদা ছেড়ে দেওয়ার কারণে নামায ত্রুটিপূর্ণ হলেও নামায আদায় হয়ে গেছে বলে গণ্য হবে।
(দেখুন- আল বাহরুর রায়েক ২/১২২, ফাতাওয়ায়ে তাতারখানিয়া ১/৭৮৫)
প্রশ্ন:তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত পড়া ছাড়া সিজদা দিলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর: তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত পড়া ছাড়া ইচ্ছাকৃত সিজদা করা গুনাহের কাজ। তবে এর কারণে নামায ভঙ্গ হবে না। বরং সকলের নামায আদায় হয়ে গেছে। আর ভুলে সিজদা করলে গুনাহও হবে না। তাবে সব সময় এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
(দেখুন- আল বাহরুর রায়িক ২/৯১, আল মুহীতুল বুরহানী-২/১৭৫)
প্রশ্ন:তারাবীর নামাযে সিজদার আয়াত পড়ার পর সিজদা করে ঐ আয়াত ভুলে আবার তিলাওয়াত করলে নতুন করে সিজদা দিতে হবে কি না?
উত্তর: না, প্র¤েœাক্ত ক্ষেত্রে পুনরায় সিজদায়ে তিলাওয়াত করতে হবে না। কেননা, নামাযের কোন রাকাতে একটি সিজদার আয়াত পড়ে সিজদা করার পর পরবর্তীতে ঐ আয়াত পুনরায় পড়লেও নতুন করে সিজদা ওয়াজিব হয় না। তাই তারাবীতেও এমন করলে সিজদা দিতে হবে না।
(দেখুন- মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা ৩/৩৮৫, রদ্দুল মুহতার ২/১১৭)


প্রশ্ন:বছরে কোন কোন দিন রোযা রাখা হারাম এবং তা কি কি?
উত্তর: বছরে পাঁচদিন যে কোন ধরণের নফল রোযা রাখা সম্পূর্ণ হারাম। ঐ পাঁচদিন হল, দুই ঈদের দুই দিন এবং ঈদুল আযহার পরের তিন দিন। অর্থাৎ, ১১ই, ১২ই, ১৩ই যিলহজ্ব। এই পাঁচ দিন যে কোন রোযা রাখা হারাম। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:কতক্ষণ সময় পর্যন্ত নফল রোযার নিয়ত করা জায়েয আছে?
উত্তর: বেলা দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত নফল রোযার নিয়ত করা দুরস্ত আছে। (দেখুনঃ তাহতাভী আলাল মারাকী)
প্রশ্ন:নফল রোযার নিয়ত করে তা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে কাযা করতে হবে কি না?
উত্তর: নফল রোযা শুরু করলে তা পূর্ণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়। তাই নফল রোযার নিয়ত করে তা ভেঙ্গে ফেললে পরবর্তীতে তা কাযা করতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:স্বামী বাড়ীতে থাকাবস্থায় তার অনুমতি ছাড়া নফল রোযা রাখা যাবে কি না?
উত্তর: স্বামী বাড়ীতে থাকা অবস্থায় তার বিনা অনুমতিতে স্ত্রীর জন্যে নফল রোযা রাখা দুরস্ত নয়। রাখলে স্বামী হুকুম করলে তা ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং পরে কাযা করে নিতে হবে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্ন:মেহমানের খাতিরে নফল রোযা ভাঙ্গা যাবে কি না?
উত্তর: মেহমান যদি একা খেতে মনে কষ্ট পায় তাহলে তার খাতিরে মেযবান (বাড়ীওয়ালা) নফল রোযা ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। ভাঙলে পরে কাযা করে নিতে হবে। তবে এই ভাঙ্গার অনুমতি সূর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত। (দেখুনঃ উমদাতুর রি‘আয়া)
মান্নতের রোযা
প্রশ্ন:মান্নতের রোযা কাকে বলে?
উত্তর: কেউ যদি আল্লাহর নামে রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে সেই রোযা রাখা ওয়াজিব হয়ে যায়। তবে কোন শর্তের ভিত্তিতে মান্নত মানলে সেই শর্ত পূরণ হওয়ার পূর্বে ওয়াজিব হয় না- শর্ত পূরণ হলেই ওয়াজিব হয়। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্ন:নির্ধারিত দিনে রোযা রাখার মান্নত করলে নিয়ত কখন করবে?
উত্তর: কোন নির্দিষ্ট দিনে রোযা রাখার মান্নত করলে এবং সেই দিন রোযা রাখলে রাত্রেই নিয়ত করা জরুরী নয়, দুপুরের এক ঘন্টা পূর্বে পর্যন্ত নিয়ত করা দুরস্ত আছে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:নির্ধারিত দিনে রোযা রাখার মান্নত না করলে তা যে কোন দিন রাখা যাবে কি না?
উত্তর: কোন দিন তারিখ নির্দিষ্ট করে মান্নত না করলে যে কোন দিন সে মান্নতের রোযা রাখা যায়। এরূপ মান্নতের রোযার নিয়ত সুবহে সাদেকের পূর্বেই হওয়া শর্ত। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:কোন নির্ধারিত দিনে, তারিখে বা মাসে রোযা রাখার মান্নত করলে ঐ দিন রোযা রাখা জরুরী কি না।
উত্তর: কোন নির্দিষ্ট দিনে, তারিখ বা মাসে রোযা রাখার মান্নত করলে সেই নির্দিষ্ট দিনে বা তারিখে বা মাসে রোযা রাখাই জরুরী নয়। অন্য যে কোন সময় রাখলেও চলবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:যদি এক মাস রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে তা লাগাতার রাখতে হবে কি না?
উত্তর: যদি এক মাস রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে পুরো এক মাস লাগাতার রোযা রাখতে হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
এতেকাফ
প্রশ্ন:রমযানের শেষের দশদিন এতেকাফ করার হুকুম কি?
উত্তর: রমযানের শেষের দশদিন এতেকাফ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। অর্থাৎ- প্রত্যেক মসজিদে ঐ এলাকার কমপক্ষে একজন হলেও এতেকাফ করতে হবে। কেউ এতেকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)
প্রশ্ন:এতেকাফ অবস্থায় চুপ থাকা সওয়াবের কাজ কি না?
উত্তর: এতেকাফ অবস্থায় চুপ থাকাকে সওয়াব মনে করে চুপ থাকা মাকরূহ। তদ্রƒপ এতেকাফ অবস্থায় বেকার বসে থাকাও ঠিক নয়, বরং সাধ্যমত কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামায, উমরী কাযা, তাসবীহ-তাহলীল পড়তে থাকবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে তাতারখানিয়া)
প্রশ্ন:বিনিময় দিয়ে এতেকাফ করালে তা জায়েয হবে কি না? এবং এতে এলাকাবাসীর সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আদায় হবে কি না?
উত্তর: বিনিময় নিয়ে এতকাফ করা বা করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয। কারণ এতকাফ একটি ইবাদত। আর ইবাদতের বিনিময় দেওয়া-নেওয়া হারাম তাই পারিশ্রমিকের উদ্দেশ্যে এতেকাফ করলে তা সহীহ হবে না। যেহেতু ঐ লোকের নিজের এতেকাফই আদায় হচ্ছে না, তাই তার এতেকাফের দ্বারা অন্যদের সুন্নাত মুয়াক্কাদা এর দায়িত্ব আদায় হওয়ার প্রশ্নই উঠে না। (দেখুনঃ রাসায়েলে ইবনে আবেদীন)
প্রশ্ন:এতেকাফকারী মুয়ায্যিন মসজিদের বাহিরে গিয়ে আযান দিতে পারবে কি না?
উত্তর: এতেকাফকারীর আযানের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়িয। তাই মসজিদের বাইরে আযানের নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আযান দিতে পারবে। (দেখুনঃ আলমুহিতুল বুরহানী)
প্রশ্ন:এতেকাফকারী মসজিদের ছাদে যেতে পারবে কি না?
উত্তর: মসজিদ একতলা হোক বা বহুতল বিশিষ্ট হোক ছাদ মসজিদের অন্তর্ভূক্ত হবে। সুতরাং এতেকাফকারী ছাদে যেতে পারবে। (দেখুনঃ আল-কাউসার)

প্রশ্ন:সদকায়ে ফিতর কার উপর ওয়াজিব হবে?
উত্তর: ঈদের দিন সুবহে সাদেকের সময় যার কাছে যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমাণ অর্থাৎ, অত্যাবশ্যকীয় আসবাব সামগ্রী ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, বাসগৃহ ইত্যাদি বাদ দিয়ে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সমমূল্য পরিমান সম্পদ থাকে তার উপর সাদকায়ে ফিতর দেয়া ওয়াজিব। উল্লেখ্য, যাকাতের মত এখানে এক বছর তার ঐ মাল অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়, বরং শুধু ঈদের দিনে মালিক থাকলে ফিতরা ওয়াজিব হবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে তাতার খানিয়া)
প্রশ্ন:রোযা না রাখলে বা রাখতে না পারলেও তার উপর সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব কি না?
উত্তর: রোযা না রাখলে বা রাখতে না পারলে তার উপরও ফিতরা দেয়া ওয়াজিব। এ কথা নয় যে, রোযা না রাখলে ফিতরাও দিতে হয়না। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:সদকায়ে ফিতর কার কার পক্ষথেকে আদায় করা ওয়াজিব?
উত্তর: সদকায়ে ফিতর নিজের পক্ষ থেকে এবং পিতা হলে নাবালেগ সন্তানদের পক্ষ থেকে দেয়া ওয়াজিব। বালেগ সন্তান, স্ত্রী, স্বামী, চাকর-চাকরাণী, মাতা-পিতা, প্রমুখের পক্ষ থেকে দেওয়া ওয়াজিব নয়। তবে যৌথ পরিবার হলে বালেগ সন্তান মাতা-পিতার পক্ষ থেকে স্ত্রীর পক্ষ থেকে ফিতরা দেয়া মুস্তাহাব। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে তাতার খানিয়া)
প্রশ্ন:সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ কত টুকু?
উত্তর: সদকায়ে ফিতর যব, খেজুর, পনির ও কিসমিস দ্বারা আদায় করলে প্রত্যেক ফিতরার জন্য ৩ কেজি ২৬৫.৯২ গ্রাম বা তার মূল্য দান করবে। আর গম বা আটা দ্বারা দিলে পৌনে দুই সের = ১৬৩২.৯৬ গ্রাম বা তার মূল্য দান করলেই ফিতরা আদায় হয়ে যাবে। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:ফিতরা কখন আদায় করবে?
উত্তর: ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা দিয়ে দেয়া উত্তম। অবশ্য নামাজের পূর্বে দিতে না পারলে পরে দিলেও চলবে। এছাড়া যদি কেহ রমজানের মধ্যেই আদায় করে দেয় তাও জায়েয আছে। (দেখুনঃ রদ্দুল মুহতার)

প্রশ্ন:“আইয়্যামে বীযের” রোযা কাকে বলে?
উত্তর: প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখাকে আইয়্যামে বীযের রোযা বলে। এ দিনগুলোতে রোযা রাখার ফযিলত হল, যে ব্যক্তি প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে নফল রোযা রাখল, সে যেন সারা বৎসর রোযা রাখল। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: শাবন মাসের ১৫ তারিখে রোযা রাখা মুস্তাহাব। আর এ দিনের আগে ও পরে যেকোন নফল রোযাই রাখা যেতে পারে। তবে এ ধারণ ঠিক নয় যে শুধু ১৫ তারিখের রোযা মাকরূহ, যদ্দরুন আগে বা পরে একটি রোযা যোগ করতে হবে । কারণ শুধু ১৫ শাবানের রোযা মাকরূহ নয়। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে আলমগীরী)
প্রশ্ন:মুহাররমের রোযার হুকুম কি?
উত্তর: ১০ই মুহাররম তারিখে নফল রোযা রাখা মুস্তাহাব। এর দ্বারা পিছনের এক বৎসরের গুনাহ মাফ হয়। এই রোযা রাখলে ১০ তারিখের সাথে ৯ তারিখ বা ১১ তারিখ মিলিয়ে মোট ২টি রোযা রাখবে। ৯ বা ১১ তারিখ বাদে শুধু ১০ই মুহাররমের রোযা(অর্থাৎ- শুধু ১টা রোযা রাখা) মাকরূহ তাহরীমী। (দেখুনঃ ফাতওয়ায়ে মাহমূদীয়া)
প্রশ্ন:যিলহজ্জ মাসের নবম তারিখ রোযা রাখার হুকুম কি?
উত্তর: যিলহজ্জ মাসের নবম তারিখ [আরাফর দিন] রোযা রাখার অনেক ফযীলত রয়েছে। এর দ্বারা পিছনের এক বৎসর এবং সামনের এক বৎসর- এর গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তবে হজ্জের অবস্থায় দূর্বল হয়ে যাওয়ার আশংকা বোধ করলে এ রোযা রাখা মাকরূহ। (দেখুনঃ ইমদাদুল ফাতওয়া)
প্রশ্ন:শাওয়াল মাসের ছয় রোযার হুকুম কি?
উত্তর: শাওয়াল মাসে (১লা শাওয়াল- ঈদুল ফিতরের দিন বাদে) ছয়টা নফল রোযা রাখলে এক বৎসর নফল রোযার ছওয়াব পাওয়া যায়। এ রোযাগুলো একাধারে রাখা যায় আবার মধ্যে মধ্যে বিরতি দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও রাখা যায়। বরং এটাই উত্তম। (দেখুনঃ আদ্দুররুল মুখতার)