আবু লাহাব ও তার স্ত্রীর ধ্বংসের ঘটনা

বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনানুযায়ী সূরা শু‘আরা-এর একটি আয়াত যার অর্থ- তোমার নিকট আত্মীয়বর্গকে [পরকাল সম্পর্কে] সতর্ক কর। আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর নবীজি মক্কার ‘সাফা’ পাহাড়ে আরোহণ করে তাঁর নিকট আত্মীয়বর্গকে একত্র করেন এবং সকলকে আখিরাতের আজাব সম্পর্কে সতর্ক করেন। এ কথা শুনে আবু লাহাব ঔদ্ধত্যের সাথে হাত নেড়ে বলল- ‘তোমার ধ্বংস হোক। এ কথার জন্যে-ই কি আমাদের একত্র করেছ? এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরা লাহাব অবতীর্ণ হয়। আবু লাহাবের এক স্ত্রী ছিল সে কাঁটা ও শুকনা কাঠ এনে নবীজির পথে বিছিয়ে রাখত, যেন তিনি কাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান এবং কাঁটাবিদ্ধ হয়ে কষ্ট পান। এ সূরায় স্বামী-স্ত্রী উভয়ের শোচনীয় পরিণতি বর্ণনা করা হয়েছে।
আবু লাহাবের পরিণতি-
বদর যুদ্ধের সাত দিন পর তার দেহে এক বিষাক্ত ফোঁড়া দেখা দেয়। অন্যদের দেহে এ রোগ সংক্রামিত হওয়ার আশংকায় পরিবারের লোকেরা তাকে একটি নির্জন স্থানে ফেলে আসে। সেখানেই নিতান্ত নিংঙ্গাবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তিন দিন পর্যন্ত লাশ এভাবেই পড়ে থাকে। অবশেষে পচন ধরলে একজন হাবশী মজদুরকে ডেকে আনা হয়। সে একটি গর্ত খনন করে লাঠি দিয়ে ঠেলে লাশটিকে উক্ত গর্তে ফেলে দেয় এবং উপরে পাথর চাপা দেয়। এই হলো দুনিয়ার লাঞ্ছনা ও ধ্বংসের অবস্থা আর আখিরাতের শাস্তি তো আছেই। সেই শাস্তি দুনিয়ার শাস্তি অপেক্ষা বহু গুণে বেশি।
আবু লাহাবের স্ত্রীর পরিণতি-
আবু লাহাবের স্ত্রীর নাম উম্মে জামিল ছিল। সে এতই খারাপ ছিল যে, সে কাঁটা ও শুকনা কাঠ এনে নবীজির পথে বিছিয়ে রাখত, যেন তিনি কাঠে হোঁচট খেয়ে পড়ে যান এবং কাঁটাবিদ্ধ হয়ে কষ্ট পান। কুরআন বলছে, সত্যের বিরুদ্ধাচারণ আর নবীকে কষ্টদানে দুনিয়াতে সে যেমন তার স্বামীর সঙ্গ দিয়েছে, জাহান্নামেও সে তেমনিভাবে তার স্বামীর সঙ্গে থাকবে। কোন কোন মুফাসসীরদের মতে আখিরাতে সে জাহান্নামের তিক্ত ও কন্টকময় গুলম, ‘যাক্কুম’ ও ‘দারী’ এর কাঠ সংগ্রহ করে ঘুরবে এবং তা দ্বারা তার স্বামীর আজাবকে আরো তীব্রতর করে তুলবে।
তাফসীরকারকগণ লিখেছেন- ঐ মহিলার গলায় অতি মূল্যবান একটি হার ছিল। সে বলত, ‘লাত-ওয্যার শপথ! মুহাম্মদের বিরুদ্ধাচরণের কাজে হারটি ব্যয় করব।’ তাই জাহান্নামেও তার গলায় একটি হার তথা শিকল থাকবে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, ঐ হতভাগা মহিলাটির মৃত্যু হয়েছে এভাবেই। উম্মে জমিল শক্ত রশি দিয়ে তার লাকড়ির আঁটি বাঁধত । একদিন সে এভাবে বাঁধা একটি লাকড়ির আঁটি মাথায় নিয়ে একটি পাথরের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছিল। এমন সময় একজন ফেরেশতা সেখানে উপস্থিত হয়ে তার লাকড়ির আঁটিটি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ফলে তা গলায় ফাঁস লেগে যায় এবং সে অবস্থায়ই সে মারা যায়।

This entry was posted in কোরআনের গল্প. Bookmark the permalink.
//